• ধর্ষক সঞ্জয়, ‘হদিশ’ নেই খুনির! তদন্তের ২১ দিন পার, হাতড়ে বেড়াচ্ছে সিবিআই
    বর্তমান | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলকাতা পুলিসের হাতে তদন্তভার থাকাকালীন একটা বিষয় মোটামুটি স্পষ্ট ছিল—মূল অভিযুক্ত সঞ্জয়ই ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার একমাত্র ‘কুশীলব’। অর্থাৎ, পুলিসের ভাষায় ‘ওপেন অ্যান্ড শাট কেস’। কিন্তু সিবিআই তদন্তের দায়িত্ব আসার পর কুয়াশা ঘিরেছে আর জি কর কাণ্ডকে। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তরুণী চিকিৎসককে ওই অভিশপ্ত রাতে ধর্ষণ করেছিল সঞ্জয়ই। কিন্তু খুনও কি সে-ই করেছে? তদন্ত শুরুর ২১ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও সিবিআই এ বিষয়ে দিশা দেখাতে পারছে না। অপরাধ এখানে দু’টি—ধর্ষণ এবং খুন। আর দ্বিতীয়টিতেই থমকে রয়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। উল্টে তথ্য-প্রমাণ লোপাটের তদন্তেই মনোনিবেশ করেছে তারা। দফায় দফায় চলছে জিজ্ঞাসাবাদ এবং পলিগ্রাফ টেস্ট। কিন্তু নতুন কোনও গ্রেপ্তারি? সঞ্জয় ছাড়া একজনও নয়। এমনকী, লাগাতার জেরার পরও আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ষড়যন্ত্রে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ জোগাড়ে ব্যর্থ তারা। 

    কাউন্টডাউন চলছে। দেড় মাসও আর বাকি নেই চার্জশিট পেশে। তাই চাপ বাড়ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের উপর। প্রতিবাদ-আন্দোলন এবং ‘জাস্টিসে’র দাবির ঢেউ আছড়ে পড়ছে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সেও। কিন্তু সিবিআই ‘যথাযথ নমুনা সংগ্রহ না হওয়ার’ সাফাই দেওয়া ছাড়া এমন কিছু করতে পারছে না, যাতে তদন্তের মোড় ঘুরতে পারে। আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে তাদের স্টেটাস রিপোর্ট দিতেই হবে। কিন্তু ‘খুনি কে’? এই প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারলে চাপ যে আরও বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হল, সঞ্জয় এখনও অপরাধ স্বীকার করেনি। পলিগ্রাফ টেস্টে সে কী বয়ান দিয়েছে, তা এখনও আড়ালেই রেখেছে সিবিআই। শুধু বলছে, এমন কিছু সে বলেছে, যা ইঙ্গিতবাহী। কী সেই ইঙ্গিত? নতুন কারও নাম? তাহলে সে এখনও গ্রেপ্তার হয়নি কেন? উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ঘটনার সময় সঞ্জয় মদ্যপ অবস্থায় থাকায়, পুরো তদন্তপর্বেই সিবিআই কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে। কারণ, ডিএনএ নমুনা ম্যাচ করলেও শুধুমাত্র প্রকৃতিস্থ না থাকার যুক্তি খাড়া করেই আদালতের শুনানিতে খেলা ঘোরানোর চেষ্টা করবেন সঞ্জয়ের আইনজীবী। তাই অকাট্য প্রমাণ হাতে আসতেই হবে।

    দিল্লি থেকে এরাজ্যে তদন্তে আসা গোয়েন্দাদের যুক্তি কী? প্রথমত, ‘অভয়া’ শারীরিকভাবে যথেষ্ট ফিট ছিলেন। তাই তাঁকে কব্জা করা সহজ ছিল না। বাধা তিনি নিশ্চয়ই দিয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজনের শরীরে দাঁত, নখ বা অন্যান্য আঘাতের চিহ্ন থাকবেই। উপরন্তু চিকিৎসক হিসেবে তরুণী জানতেন, শরীরের কোন অংশে আঘাত করলে ধর্ষক জব্দ হবেন। তেমন কিছু তিনি করেননি কেন?

    জানা যাচ্ছে, ধৃত সিভিকের শরীরে কিছু আঁচড়ের দাগ রয়েছে। সিবিআইয়ের প্রশ্ন, এই সামান্য প্রতিরোধ গড়েই অভয়া হেরে গেলেন? তদন্তকারীরা বলতে চাইছেন, অন্তত আরও একজন চেপে ধরলে ওই তরুণীকে সহজে খুন করা সম্ভব ছিল। অথচ, এই যুক্তির পক্ষে তথ্য-প্রমাণ নেই! খুনের ঘটনাস্থল অন্য হতে পারে বলে একটি সম্ভাবনাও হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাতেও সায় মিলছে না। কারণ, তাহলে করিডর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সিসি ক্যামেরায় ছবি থাকত। সিবিআইয়ের দাবি, হাসপাতালের শীর্ষকর্তা ক্যামেরার ফুটেজে কারিকুরি করেছেন কি না, তা ফরেন্সিক রিপোর্ট না এলে বলা যাচ্ছে না। এদিনও অবশ্য তারা আর জি করের আটতলায় গিয়েছিল তদন্ত করতে। পাশাপাশি, পনেরো দিনের টাওয়ার ডাম্প নিয়ে সন্দেহজনক গতিবিধির খোঁজও চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। একইসঙ্গে কিন্তু এগচ্ছে ঘড়ির কাঁটা। আর চাপ বাড়ছে সিবিআইয়ের।
  • Link to this news (বর্তমান)