• মার্কিন মুলুকে জন্ম, ২০ বছর ধরে ঠিকানা ল্যান্সডাউন, ভারতীয় হতে চেয়ে হাইকোর্টে বাঙালি যুবক 
    বর্তমান | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পদবি ঘোষ। একেবারে মাছে ভাতে বাঙালি। ১৯ বছর ন’মাস এদেশে বসবাস করছেন। তা সত্ত্বেও তিনি এদেশের নাগরিক নন! আইনের গেরো এবং ভাগ্যের পরিহাসে কোনও উপায় না দেখে অবশেষে হাইকোর্টের দ্বারস্থ বছর কুড়ির যুবক দেবরূপ ঘোষ। তাঁর দাবি একটাই, তিনি ভারতীয় নাগরিক হতে চান। 

    বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার ল্যান্সডাউনের বাসিন্দা দেবরূপ। তাঁর জন্ম মার্কিন মুলুকে। জন্মের পর বাবা-মায়ের দাম্পত্য সম্পর্কে চিড় ধরে। দেবরূপের যখন আড়াই মাস বয়স তখন বাবা-মার বিচ্ছেদ। ছেলের দেখভালের দায়িত্ব বর্তায় বাবার উপর। আড়াই মাস বয়সে তাঁকে নিয়ে ভারতে চলে আসেন বাবা। তবে জন্ম সে দেশে হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী, দেবরূপ মার্কিন নাগরিক। যে কারণে ছেলেকে নিয়ে দেশে ফেরার পরই দেবরূপের পাসপোর্ট সারেন্ডার করার জন্য কলকাতায় ইউএস কনস্যুলেট জেনারেলের দ্বারস্থ হন বাবা। সেখান থেকে তাঁকে জানান হয়, সাবালক না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। তারপর আঠারো বছর অপেক্ষার পর মাকিন নাগরিকত্ব ত্যাগ ও পাসপোর্ট সারেন্ডারের জন্য কনস্যুলেট জেনারেলের দ্বারস্থ হন দেবরূপ। এবার সেখান থেকে তাঁকে জানান হল, তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব না পাওয়া পর্যন্ত এমনটা সম্ভব নয়। এবার দেবরূপ ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য আবেদন জানান। কিন্তু এদেশের রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসের তরফে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, যতক্ষণ না তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব পাচ্ছেন এবং মার্কিন পাসপোর্ট সারেন্ডার করছেন ততক্ষণ তাঁকে ভারতীয় পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব নয়। 

    বিচারপতি শম্পা সরকারের এজলাসে মামলার শুনানিতে দেবরূপের আইনজীবী মুকুল লাহিড়ি ও দূর্গাপ্রসাদ দত্ত দাবি করেন, ১৯৫৫ সালের ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনে অন্য দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগের আবেদনের জন্য কোনও সংস্থান নেই। অথচ আইন অনুযায়ী, আগে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ না করলে তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে এই যুবকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। শুনানিতে তাঁরা আরও দাবি করেন, গোটা বিষয়টি ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রককে জানানোর পরও কোনও সুরাহা হয়নি। 

    এই বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি সরকার নির্দেশে জানিয়েছেন, যেহেতু এক্ষেত্রে আইনের সংস্থান নেই, তাই ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ায় জন্য ওই যুবকের কী করণীয় তা বাতলে দিতে হবে কলকাতায় অবস্থিত ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের কার্যালয়ের সিনিয়র আধিকারিকদেরই। চার সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে বলে নির্দেশে জানিয়েছেন বিচারপতি। 
  • Link to this news (বর্তমান)