এই সময়: আরজি করের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার তদন্তে সময়ের হিসেব মেলাতে ব্যস্ত সিবিআই। সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটার জেনারেল অভিযোগ করেছিলেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সি তদন্তভার নিয়েছিল পাঁচ দিন পরে, তত দিনে সিন অফ ক্রাইম বা অকুস্থলে অনেক বদল হয়ে গিয়েছিল। সেই কারণে এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি অপরাধের আগের ঘটনাপরম্পরা সাজাতে সাহায্য নিচ্ছেন টাওয়ার ডাম্পিং পদ্ধতির।পাশাপাশি ৯ অগস্ট সকাল ৯টা ২০ মিনিটে কলেজের সেমিনার রুমে পড়ে থাকতে প্রথম দেখা গেলেও কেন পুলিশ ও হাসপাতাল প্রশাসন অন্তত ৫০ মিনিট পরে খবর পেলেন, সেই ফাঁকও পূরণ করতে চাইছেন তদন্তকারীরা। হাসপাতাল চত্বরের ভিতরে বয়েজ হস্টেলেও রবিবার তদন্তে যায় সিবিআইয়ের একটি দল।
অসঙ্গতি কয়েকজনের বয়ানে?
সিবিআই সূত্রের খবর, মোবাইল টাওয়ার ডাম্পিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনার রাতে আরজি করের ওই চত্বরের আশপাশ থেকে কতগুলি ইনকামিং-আউটগোয়িং কল গিয়েছিল, তা বের করা হয়েছে। সেখান থেকে ঝাড়াইবাছাই করে ঘটনার রাতে আরজি করের সেমিনার রুমের আশপাশে থাকা নিরাপত্তারক্ষী, জুনিয়র ডাক্তার, নার্সিং স্টাফ মিলিয়ে ১২৫ জনের নামের তালিকা করেছেন তদন্তকারীরা।
তাঁদের মধ্যে ২২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। তবে, মোবাইলের টাওয়ার লোকেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সবার বয়ান মেলেনি বলেই সূত্রের দাবি। এই পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত আরও কয়েকজনের পলিগ্রাফ টেস্ট করার কথা ভাবছে সিবিআই।
সময়ের ফারাক কেন?
৯ অগস্ট সকাল ৯টা ২০ নাগাদ আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার রুমে তরুণী চিকিৎসকের দেহ প্রথম দেখতে পান প্রথম বর্ষের এক পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি। আর ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রথম পৌঁছয় সকাল ১০টা ২০ নাগাদ। অথচ হাসপাতালের চৌহদ্দিতেই রয়েছে পুলিশ আউটপোস্ট। তাহলে কেন একঘণ্টা সময় লাগল পুলিশের, তা খতিয়ে দেখছে সিবিআই।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিবিআই সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ দাবি করেছেন, তিনিও খবর পান সকাল ১০টা ২০ নাগাদ। তাঁর দাবি, ওই বিভাগের একজন অধ্যপক চিকিৎসক তাঁকে ফোন করেছিলেন সকাল দশটা নাগাদ।
তবে, ওই সময়ে তিনি ওয়াশরুমে থাকায় ফোন ধরতে পারেননি। ১০টা ২০ নাগাদ রিং ব্যাক করেন সন্দীপ। ততক্ষণে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে। এই টাইমফ্রেম মিলিয়ে দেখে তদন্তকারীরা বোঝার চেষ্টা করছেন, কারও বয়ানে কোথাও ফাঁক থাকছে কি না।
স্ক্যানারে অন্য অস্বাভাবিক মৃত্যুও
গত ৯ অগস্টের আগেও আরজি কর হাসপাতালে একাধিক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। গত দু’বছরে ওই হাসপাতালে কতজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, তারও খতিয়ান চায় সিবিআই। সূত্রের খবর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এই তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, এর আগে যে কয়েকজন পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ওই হাসপাতালে, তার সব ক্ষেত্রে সঠিক তদন্ত হয়নি। তদন্তকারীরা বোঝার চেষ্টা করছেন, তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুন বা আগের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পিছনে কোনও দুর্নীতি চক্রের যোগ আছে কি না।
বয়েজ় হস্টেলে পার্টি?
ধর্ষণ-খুনে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের ঘনিষ্ঠ কলকাতা পুলিশের এএসআই অনুপ দত্তকে রবিবার ফের জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। গত সপ্তাহে তাঁর পলিগ্রাফ টেস্টও হয়েছে। সূত্রের দাবি, ফের কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করতেই তাঁকে তলব করা হয়েছিল। এ দিন সকালে হাসপাতালে গিয়েছিলেন সিসিবিআইয়ের ৫ জন অফিসার। আবার, এ দিন রাতে বয়েজ় হস্টেলেও যান তদন্তকারীরা।
সিবিআই জানতে পেরেছে, ৮ অগস্ট রাতে ওই হস্টেলে কোনও পার্টি হয়েছিল। সে কারণেই বেশি রাত পর্যন্ত অনেক পড়ুয়া জেগে ছিলেন। ঘটনার রাতে অস্বাভাবিক কিছু নজরে এসেছিল কি না, তা জানতে চান তদন্তকারীরা।