• ‘বিধি-ভাঙা’ শংসাপত্রে বিতর্কে অভীক
    আনন্দবাজার | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • আর জি কর কাণ্ডের পরে স্বাস্থ্য-প্রশাসনের দুর্নীতিতে উঠে এসেছে ‘বর্ধমান শাখা’র নাম। এর ‘মাথায়’ থাকা এসএসকেএমের পিজিটি অভীক দে-কে নিয়ে বিতর্ক থামছে না। তরুণী চিকিৎসককে খুন, ধর্ষণের ঘটনার পরে আর জি করের সেমিনার রুমে তাঁর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বার অভীকের পিজিটি পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিলেন চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস’ ও আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা।

    তাঁদের দাবি, করোনা-পর্বে গ্রামীণ এলাকায় চিকিৎসা করলে স্নাতকোত্তরে ভর্তির সময় বিশেষ ছাড় দিয়ে ‘সার্ভিস কোটা’ পাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু বর্ধমানের নারায়ণদিঘির বাসিন্দা অভীককে শংসাপত্র (বিএমসি/১৯০৩, তারিখ: ১৬/৬/২০২২) দিয়ে সেই স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ কৌস্তভ নায়েক।

    তাঁদের অভিযোগ, শংসাপত্র পাওয়ার যে সব নিয়ম, তার কোনওটাই মানেননি অভীক। তিনি বর্ধমান মেডিক্যালের রেডিয়োলজি বিভাগের আরএমও পদে থাকলেও শংসাপত্রে বর্ধমান ২ ব্লকের বামচাঁদাইপুর গ্রামীণ এলাকায় ‘অনাময়’ হাসপাতালে ২০১৮ সাল থেকে তিনি কর্মরত রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।

    আন্দোলনকারী চিকিৎসক-পড়ুয়াদের একাংশ স্বাস্থ্য-প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, ওই শংসাপত্রের জন্যই ‘সার্ভিস কোটা’র সুযোগ পেয়েছেন অভীক। তিনি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেও বাড়ির কাছে বর্ধমানে আরএমও করার সুযোগ পেয়েছেন। আবার স্নাতকোত্তর না করে তাঁর আরএমও পাওয়াটাও রহস্যজনক।

    তাঁদের অভিযোগ, অনিয়ম করে শংসাপত্র দেওয়ার ‘পুরস্কার’ হিসাবেই বর্ধমান মেডিক্যালের তৎকালীন অধ্যক্ষ কৌস্তভ নায়েক বর্তমানে রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তার পদে বসেছেন। চিকিৎসকদের সংগঠন ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস’ বছর খানেক আগে স্বাস্থ্য প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে কী ভাবে অভীক ওই শংসাপত্র পাওয়ার ‘যোগ্য’ হলেন, তা জানতে চায়। তাঁদের অভিযোগ ছিল, অনেক চিকিৎসক গ্রামাঞ্চলে সরকারি নিয়ম মেনে দিনরাত পরিশ্রম করেছিলেন, অথচ তাঁদের কথা বিবেচনা না করে সমস্ত নিয়ম লঙ্ঘন করে অভীককে কোভিডের শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে।

    ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, অভীক বর্ধমান পুর এলাকার মধ্যে থাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে বেতন তুলেছেন। আবার তারই শাখা গ্রামীণ এলাকার অনাময় হাসপাতালে তাঁকে কর্মরত বলে দেখানো হয়েছে। এই জাতীয় শংসাপত্র জারি করা যায় না বলেও দাবি করেছেন তাঁরা।

    রবিবার ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিসের’ যুগ্ম সম্পাদক সুবর্ণ গোস্বামী প্রকাশ্যেই অভীকের পিজিটি করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, “কোভিডে একদিনও বর্ধমান মেডিক্যাল বা অনাময়ে ওঁকে দেখা যায়নি। তার পরেও তাঁকে (অভীক দে) অনাময়ে কর্মরত বলে শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের কলেজ অধ্যক্ষ ঠিক ভাবে শংসাপত্র দেননি।’’

    বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের একটি চিঠিতে (বিএমসি-৬০৪৫, তারিখ: ২/১১/২০২৩) জানানো হচ্ছে, অনাময়ে আরএমও এবং ক্লিনিক্যাল টিউটর হিসেবে অভীক ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে কর্মরত।

    তবে ওই শংসাপত্রের জেরে স্নাতকোত্তরে ভর্তিতে বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন কি না, তা জানা নেই বলে লেখা রয়েছে। বর্তমান রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক এ দিন বলেন, “আমি এ সব বলার কেউ নই। তাই কোনও মন্তব্য করব না।” অভীকের ফোন ‘পরিষেবার বাইরে’ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি আগেই জানিয়েছেন, সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)