• শাসানির সংস্কৃতি! বিদ্ধ সন্দীপ-ঘনিষ্ঠের দলবল
    আনন্দবাজার | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ‘মাস্টারমশাই, আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি।’- প্রয়াত পরিচালক তপন সিংহের ‘আতঙ্ক’ ছবির বিখ্যাত সংলাপ।

    মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার এবং পড়ুয়াদের একাংশের অনুযোগ, কলেজ কর্তৃপক্ষের একাংশও অনেক কিছুই দেখেও দেখছেন না! এখানে ভয় ও শাসানির সংস্কৃতি (থ্রেট কালচার) চালানোর অভিযোগ উঠেছে মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিক ও তাঁর ‘দলবলে’র বিরুদ্ধে। মুস্তাফিজুর মেদিনীপুর মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তার। হাউসস্টাফ হিসেবে কর্মরত। আর জি করের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ হিসাবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে।

    মুস্তাফিজুর ও তাঁর ‘দলবলে’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, এই দাবিতে সরব হয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তার এবং পড়ুয়াদের একাংশ। গত বৃহস্পতিবার কলেজে অবস্থানে বসেছিলেন তাঁরা। ওই দিন কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, মুস্তাফিজুর আপাতত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতে পারবেন না। পরবর্তী নির্দেশ অবধি। অবশ্য একদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার তড়িঘড়ি ফের কলেজ কাউন্সিলের বর্ধিত বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে তাঁর হাসপাতাল চত্বরে ঢোকা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। একদিনের মাথায় কেন সিদ্ধান্ত বদল, কার বা কাদের চাপে, প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন জুনিয়র ডাক্তার এবং পড়ুয়াদের একাংশ। শনিবার রাত পর্যন্ত তাঁরা কলেজে অবস্থান করেছেন। ‘ঘেরাও’ হয়েছিলেন হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত রাউত, কলেজের স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের ডিন রামনারায়ণ মাইতি প্রমুখ। সূত্রের খবর, আজ, সোমবার ফের কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক হবে। সেখানে জুনিয়র ডাক্তার এবং পড়ুয়াদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা হবে। মুস্তাফিজুরদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

    হাসপাতালের এক জুনিয়র ডাক্তার বলছেন, ‘‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে কী ভাবে একটা নোটিস ইনভ্যালিড করে দিতে পারেন কর্তৃপক্ষ? কে ওঁদের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন?’’ ‘কর্তৃপক্ষ কিসের ভয়? মুস্তাফিজুর তোমার কে হয়?’- শনিবার রাতের অবস্থান থেকে এই স্লোগানও ওঠে। দেখা যাচ্ছে, শুক্রবার বৈঠকের পরে যে নোটিস বেরিয়েছে, সেখানে অধ্যক্ষ, সুপারের পাশাপাশি সই রয়েছে কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সোমদেব গুপ্তের। সোমদেব মানছেন, ‘‘অধ্যক্ষার অনুরোধে আমি সই করেছিলাম। ডিন আউট অফ স্টেশন ছিলেন। ওখানে সিনিয়র মোস্ট ফ্যাকাল্টি বলতে আমিই ছিলাম।’’

    কেন একদিনের মাথায় ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার? অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দীর যুক্তি, ‘‘ও তো হাউসস্টাফ। হাউসস্টাফশিপ কমপ্লিট করতে গেলে ওকে তো কলেজে ঢুকতে হবে। তাই যেটা আগে লেখা ছিল (নোটিসে), সেটা সংশোধন করা হয়েছে।’’ সোমদেবের ব্যাখ্যা, ‘‘বৃহস্পতিবার যখন মিটিং হয়েছিল, তখন প্রিন্সিপালের অফিস বন্ধ ছিল, এমএসভিপির (সুপারের) অফিসও বন্ধ ছিল। তাই ওর স্ট্যাটাসটা ঠিক কী, সেটা সে দিন পাওয়া যায়নি! পরে কাগজপত্র খতিয়ে দেখা গিয়েছে, ওর হাউসস্টাফশিপের মেয়াদ রয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘একজন হাউসস্টাফকে তো ও ভাবে বলা যায় না যে, ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারবে না। ওদের (অবস্থানকারীদের) বলা হয়েছে, তথ্যপ্রমাণ দেওয়ার কথা। তদন্ত কিন্তু চলবে (মুস্তাফিজুরদের বিরুদ্ধে)। এমন নয় যে, তদন্তটা বন্ধ হয়ে যাবে।’’ মুস্তাফিজুরেরা কি প্রভাবশালী? এই অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের জবাব, ‘‘কে প্রভাবশালী, কে প্রভাবশালী নয়, সেটা আমি কী করে বলব!’’

    তাঁর বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ। তবে চেষ্টা করেও মুস্তাফিজুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইল বেজে গিয়েছে। মুস্তাফিজুরের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত এক জুনিয়র ডাক্তারের দাবি, ‘‘ওঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিছু মানুষ আমাদের প্রধান দাবিগুলি থেকে সরে গিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করতে নেমেছে। এরা সমাজের শত্রু!’’ কাউকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে? সুপার জয়ন্ত রাউতের জবাব, ‘‘কাউকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে না। তদন্ত চলছে।’’ চাপে রয়েছেন? স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের ডিন রামনারায়ণ মাইতির জবাব, ‘‘কোনও চাপ নেই। আর যা বলার, অধ্যক্ষা বলবেন। আমি কিছু বলব না।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)