ফুটবল মাঠের পর এ বার সাঁতার প্রতিযোগিতাতেও আর জি কর কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবি উঠল। একাশি কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতা উপলক্ষে রবিবার ভাগীরথীর পাড়ে জড়ো হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা। হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে তাঁরা স্লোগান দিলেন ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। তাঁদের মোবাইলেও বেজেছে অরিজিৎ সিংহের প্রতিবাদী গান। তবে কোনও রাজনৈতিক স্লোগান শোনা যায়নি।
রবিবার ভোরে আহিরণ ঘাট থেকে শুরু হয় ৮১ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতা। শনিবার রাতে প্রতি বারের মতো এ বারও সংবর্ধনা জানানো হয় সাঁতারুদের রঘুনাথগঞ্জের দাদাঠাকুর মঞ্চে। সেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও যাবতীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয় আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে। এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জঙ্গিপুরের ওই অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ছিলেন তৃণমূল নেতা বিকাশ নন্দ।
আহিরণে অব্যবস্থার মধ্যে শুরু হয় ৭৮তম সাঁতার প্রতিযোগিতা। অভিযোগ, ঘাটে পর্যাপ্ত আলো, নৌকো ছিল না। বিকাশের দাবি, ‘‘৯ জন সাঁতারু ও তাঁদের লোকজনকে রাখার হোটেলও মেলেনি। অনেককে গভীর রাতে সরিয়ে আনতে হয়েছে রঘুনাথগঞ্জে।” তিনি বলেন, “প্রতি বারই ২০ জনের বেশি প্রতিযোগী থাকেন। বিভিন্ন রাজ্য ও দেশ থেকে আসেন তাঁরা। এ বার সেই সংখ্যা ৯-এ নেমে এসেছে। বাংলাদেশ বা অন্য দেশ থেকে প্রতিযোগীরা আসেননি এ বার।
ভোর ৫টা নাগাদ সাঁতার শুরু হলেও জৌলুস ছিল না। ভাগীরথীর দু’পাড়ে দর্শকের সংখ্যা ছিল কম। বেলা সাড়ে ১১টায় প্রতিযোগীরা লালগোলার সীতেশনগর ও সাগরদিঘির ইসলামপুরে পৌঁছতেই দু’পাড়ে জড়ো হন গ্রামবাসীরা। তাঁরা স্লোগান দেন, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। এক পাড়ে একাধিক মোবাইলে বাজতে থাকে অরিজিতের গান। সাঁতারুদের কানে সেই আওয়াজ না গেলেও সঙ্গের নৌকোর যাত্রীরা তা দেখেন। কয়েক জন গ্রামবাসীদের উদ্দেশে হাতও নাড়েন। প্রসঙ্গত, দিনকয়েক আগে যুবভারতীতে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে। ওইদিন দু’দলের হাজার হাজার দর্শক হাতে হাত মিলিয়ে আর জি করের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছিলেন। এ বার প্রাচীন এই সাঁতার প্রতিযোগিতাতেও আর জি করে নিয়ে রোষের ঢেউ আছড়ে পড়ল।
অন্য দিকে, আয়োজনের অব্যবস্থা নিয়ে বিকাশ বলেন, ‘‘এই প্রতিযোগিতা আগে ৭৪ কিমির ছিল। রঘুনাথগঞ্জ থেকে শুরু হত। পরে রাজ্যে বেশি দূরত্বের এক প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ায় এই প্রতিযোগিতার দূরত্ব বাড়ে। নিয়ে যাওয়া হয় আহিরণে। সেখানে শহরের মতো পরিকাঠামো নেই। অন্য প্রতিযোগিতাটি এখন বন্ধ। আমরা এই প্রতিযোগিতা ৭৪ কিমিতে নামিয়ে রঘুনাথগঞ্জ থেকে শুরুর প্রস্তাব দিয়েছি।” জেলা সাঁতার সংস্থার আহিরণ সাব কমিটির আহ্বায়ক সুভাষ লালা যদিও বলেন, ‘‘সাঁতারুদের থাকার সমস্যা হয়নি। দু’-একজন কর্মকর্তাকে ঘর দেওয়া যায় নি। ঘাটে আলোর ব্যবস্থা অন্যবারের চেয়ে ভাল ছিল। তবে আহিরণ গ্রামীণ এলাকা। কিছু সমস্যা তো থাকবেই।’’