ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে সদ্যোজাত সহ ৭ মৃত্যু? খোঁজ নিল bangla.aajtak.in
আজ তক | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
চিকিৎসকদের টানা কর্মবিরতির জেরে চলছে লাগাতার দুর্ভোগ। চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে মুমূর্ষু রোগীকেও। তারপরও কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে অনড় তাঁরা। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে বাংলার হাসপাতালগুলিতে টানা কর্মবিরতি চলছে জুনিয়ার ডাক্তারদের। আর এই আন্দোলনের খেসারত দিতে হচ্ছে অভাবী রোগীদের। চূড়ান্ত অচলাবস্থা চলছে হাসপাতালগুলিতে। bangla.aajtak.in-কে স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র জানাল, গত ৯ অগাস্ট থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতির কারণে অন্তত ৭ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের ওই সূত্র এহেন দাবি করলেও, রোগী-মৃত্যুর সঙ্গে আন্দোলনের সম্পর্ক মানতে নারাজ আন্দোলনকারী ডাক্তাররা।
সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে সাধারণত প্রতিদিন প্রায় ৪০০টি নির্ধারিত (ইলেকটিভ) সার্জারি হয়ে থাকে, কিন্তু কর্মবিরতির কারণে এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫,০০০ নির্ধারিত অস্ত্রোপচার বাতিল করতে হয়েছে। ফলে প্রচুর রোগী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, যা তাদের পরিবারগুলির ওপর আর্থিক এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছে।
একটি উদাহরণ হিসেবে, উত্তর ২৪ পরগনার এক ব্যক্তি জানিয়েছেন যে, তাঁকে তাঁর স্ত্রীর ডিম্বাশয়ের সিস্টেক্টমির জন্য ঋণ নিতে হয়েছে। এই অপারেশনটি যদি সরকারি হাসপাতালে করা যেত, তাহলে তাঁর কোনও খরচ হত না। কিন্তু কর্মবিরতির কারণে তাঁকে বাধ্য হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হয়। সরকারি স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প, স্বাস্থ্য সাথী, এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হওয়ায় তিনি ৭৫,০০০ টাকা ঋণ নিতে বাধ্য হন।
সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হওয়ার ফলে বহু রোগী এবং তাদের পরিবার বিপদে পড়েছে। কিডনিতে পাথর ধরা পড়া পাঁচ বছর বয়সী একটি বালক এবং স্ট্রোক আক্রান্ত একাধিক বয়স্ক রোগীকে সরকারি হাসপাতালগুলিতে ভর্তি নেওয়া হয়নি। তাঁরা কোথাও চিকিৎসা না পেয়ে শহরের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরছেন।
এমনই এক রোগীর পরিবারের একজন জানিয়েছেন, তাঁর ছেলের কিডনিতে পাথর ধরা পড়ার পর তাঁকে একটি সরকারি হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হলেও কোথাও চিকিৎসা করাতে পারছেন না। অন্য একজন রোগী জানিয়েছেন, তাঁর বাবাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে, কারণ মেডিক্যাল কলেজে কোনও চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না।
জুনিয়ার ডাক্তাররা আন্দোলনের অংশ হিসেবে টেলিমেডিসিন ক্লিনিকের আয়োজন করলেও, এটি কি সরকারি হাসপাতালের ওপিডি ক্লিনিকগুলির কার্যকর বিকল্প হতে পারে? তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। টেলিমেডিসিন ক্লিনিক শারীরিক পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে সম্পূর্ণ কার্যকর নয় বলে স্বীকার করেছেন একজন জুনিয়র ডাক্তার।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক-ছাত্র অনিকেত মাহাত বললেন, 'কর্মবিরতির জেরে রোগীমৃত্যু হয়ে থাকলে তা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু তার দায় ট্রেনি ডাক্তারদের নয়। স্বাস্থ্য দফতর শূন্যপদ পূরণ করছে না কেন। এখন আমরা কর্মবিরতি তুলে নিয়ে এই ঘটনার আসল দাবিটাই উঠে যাবে। আমরা জানি রোগীদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু সরকার কেন শুধুমাত্র জুনিয়ার ডাক্তারদের নিয়ে চালাতে চাইছে। রোগী ও ডাক্তারের অনুপাত বাড়াতে আগ্রহী নয় কেন্দ্র ও রাজ্য। একজন ট্রেনির কী দোষ। আমরা তো শিখতে এসেছি। এই ৭ জনের মৃত্যু থেকে শিক্ষা নিয়ে হেলথ ডিপার্টমেন্টকে সাজানো উচিত।'