• সত্তর বছর পেরনোর পর স্বীকৃত শ্রমিক সংগঠন পাচ্ছে চিত্তরঞ্জন
    এই সময় | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, আসানসোল: প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পরে রেলবোর্ড স্বীকৃত শ্রমিক সংগঠন পেতে চলেছে রেল শহর চিত্তরঞ্জন। রেলের বিভিন্ন জোনের সঙ্গে আগামী ডিসেম্বরে গোপন ব্যালটে ভোটাভুটির মাধ্যমে চিত্তরঞ্জনেও ঠিক হবে কোন সংগঠন স্বীকৃতি পেতে চলেছে।শুরুর সময় থেকে চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানায় নেই স্বীকৃত কোনও শ্রমিক সংগঠন। ৫৬ বছর আগে গোপন ব্যালটে ইউনিয়নের স্বীকৃতির দাবিতে চিত্তরঞ্জনে প্রথম আন্দোলন শুরু করেছিল সিটু অনুমোদিত লেবার ইউনিয়ন। এই ইস্যুতে ১৯৬৮ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রথম ধর্মঘটেরও ডাক দিয়েছিল তারা। ১৯৭৯ সালে লেবার ইউনিয়নের ডাকে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়।

    আন্দোলনের পরিণামে ইউনিয়নের তৎকালীন নেতৃত্বের উপরে নেমে আসে শাস্তির খাঁড়া। কিন্তু এই দাবিতে আন্দোলন আরও জোরদার হতে থাকে। একই দাবিতে ১৯৯৬ সালে স্টাফ কাউন্সিলের নির্বাচন বয়কট করার ডাক দেয় লেবার ইউনিয়ন। সেদিনও আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও কর্মীরা।

    ইউনিয়নের দাবি নিয়ে ২০১২ সালে হাইকোর্টে যায় লেবার ইউনিয়ন। ২০১৭ সালে হাইকোর্ট নির্দেশে জানায়, অবিলম্বে গোপন ব্যালটে ইউনিয়ন স্বীকৃতির নির্বাচন করাতে হবে। এই রায় চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় প্রশাসন। সেখানেও একই রায় বহাল থাকে। এর পর মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। মামলা ফিরিয়ে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টও জানিয়ে দেয় চিত্তরঞ্জনেও গোপন ব্যালটে নির্বাচন করাতে হবে।

    এর পরেই দেশের রেল জোনগুলোর সঙ্গে চিত্তরঞ্জনেও গোপন ব্যালটে ভোটের সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে লেবার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাজীব গুপ্ত বলেন, ‘৩০ অগস্ট ভারতের বিভিন্ন জোনের রেল ইউনিয়নগুলোর নির্বাচনের সঙ্গে চিত্তরঞ্জনেও শ্রমিক নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হলো। চিত্তরঞ্জনের ইতিহাসে এটা প্রথম। অবশেষে রেল শ্রমিকদের ৫৬ বছরের লড়াইয়ে সাফল্য এলো।’

    কিন্তু ব্যালটের মাধ্যমে এই নির্বাচনের গুরুত্ব কী? জবাবে রাজীব বলেন, ‘চিত্তরঞ্জনের মতো এত বড় কারখানায় রেলকর্তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা বা তার সমাধানে নির্দিষ্ট কোনও ব্যবস্থা নেই। এই ভোটে জয়ী শ্রমিক সংগঠন সরাসরি রেলবোর্ড থেকে স্বীকৃতি পাবে।’

    তিনি জানান, নির্দিষ্ট সময় অন্তর জোনাল বা আঞ্চলিক রেলওয়েতে গোপন ব্যালটে নির্বাচন হয়। সেখানে স্বীকৃত ইউনিয়নের সঙ্গে রেলকর্তারা শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন। এ বার চিত্তরঞ্জনের শ্রমিকরাও সেই সুযোগ পেতে চলেছেন।

    চিত্তরঞ্জন রেল কারখানার আইএনটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ সিং বলেন, ‘রেলবোর্ডের সিক্রেট ব্যালট ইলেকশন কমিটি জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বরের ৪ থেকে ৬ তারিখের মধ্যে ভারতীয় রেল-সহ চিত্তরঞ্জনে ভোট হবে। ১২ ডিসেম্বর ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। তার আগে প্রকাশ করা হবে ভোটার তালিকা।’

    ভোটের জন্য এখনই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে জানিয়ে ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা কারখানার শপ বা অফিসভিত্তিক প্রতিনিধি ঠিক করে ফেলেছি, যাঁরা এই নির্বাচনে লড়াই করবেন।’ এই দুই ইউনিয়ন ছাড়াও ভারতীয় রেল কর্মচারী সঙ্ঘ এবং আরও একাধিক শ্রমিক সংগঠন ভোটের লড়াইয়ে থাকবে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।
  • Link to this news (এই সময়)