• শোকপ্রস্তাবে আরজি করের নির্যাতিতার উল্লেখের দাবি পদ্মের, বিধানসভা চত্বরেই মৌনী মিছিল শুভেন্দুদের
    আনন্দবাজার | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনের প্রথম দিনেই আরজি কর-কাণ্ডে তপ্ত অধিবেশন কক্ষ। প্রথম দিনে শোকপ্রস্তাবের পরই অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যাওয়া কথা ছিল। কিন্তু সেই শোকপ্রস্তাবে নাম ছিল কেবল প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। আরজি করের নির্যাতিতার বিষয়ে সেখানে কোনও উল্লেখ ছিল না। তা নিয়েই আপত্তি জানান বিজেপি বিধায়কেরা। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি জানান, শোকপ্রস্তাবে বুদ্ধদেবের সঙ্গে আরজি করে নির্যাতিতার প্রসঙ্গও রাখতে হবে। আরজি কর-কাণ্ডের কথা যুক্ত করার দাবিতে অধিবেশন কক্ষে সরব হন শুভেন্দু। কিন্তু স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, আইনগত সমস্যা থাকায় নির্যাতিতার নাম দেওয়া সম্ভব নয়।

    এরই মধ্যে তৃণমূল ও বিজেপি বিধায়কদের মধ্যে একপ্রস্ত তর্কাতর্কি শুরু হয়ে যায়। শুভেন্দু যখন স্পিকারকে কিছু বলতে উঠেছিলেন, তখন পূর্বস্থলির বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় তাঁকে বসার জন্য বলেন। শাসক ও বিরোধী বিধায়কদের তর্কাতর্কিতে প্রথম দিনেই তপ্ত হয় অধিবেশন। যদিও শেষ পর্যন্ত আরজি করের নির্যাতিতার নাম বা আরজি করের প্রসঙ্গ যুক্ত হয়নি শোকপ্রস্তাবে। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেবের শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন স্পিকার। এর পর অধিবেশন সোমবারের মতো মুলতুবি হয়ে যায়। কিন্তু বিজেপি বিধায়কেরা এর পরও নিজেদের আসনে বসে থাকেন। দৃশ্যত অর্ধেক ফাঁকা অধিবেশন কক্ষেই বিজেপি পরিষদীয় দলের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন শুভেন্দু।

    আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদ উঠে আসে শুভেন্দুর গলায়। আরজি কর-কাণ্ডের কথা উল্লেখ করে অধিবেশন কক্ষেই এক মিনিট নীরবতা পালন করেন শুভেন্দু ও অন্য বিজেপি বিধায়কেরা। এর পর বিধানসভা চত্বরেই আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে মৌনী মিছিল করেন তাঁরা। পরে শুভেন্দু বলেন, “আমি বলেছিলাম ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে নিহত কর্মরতা চিকিৎসকের কথা উল্লেখ করুন। কিন্তু স্পিকার প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমরা বুদ্ধবাবুকে সম্মান করি বলে প্রতিবাদ করে কিছু বলিনি। পরে আমাদের মতো করে প্রয়াত বোনকে সম্মান জানিয়েছি।” তিনি আরও জানান, যে হেতু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী নির্যাতিতার নাম প্রকাশ করা যায় না, তাই নির্যাতিতার নামোল্লেখ না করেই শোকপ্রস্তাবের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু স্পিকার তাতে রাজি হননি বলে দাবি শুভেন্দুর।

    তবে শোকপ্রস্তাবে নির্যাতিতার নাম সংযোজনের দাবিকে ‘অবাস্তব’ হিসাবেই ব্যাখ্যা করছেন তৃণমূল নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ ধরনের অবাস্তব কথা আমি কখনও বিরোধী দলের কাছে শুনিনি। কিন্তু আইনত কতগুলি বাধা রয়েছে। শোকপ্রস্তাবে কখনও ধর্ষিতার নাম উল্লেখ করা যায় না। সে ক্ষেত্রে যাঁর নাম উল্লেখ করা যায় না, তাঁর সম্পর্কে শোকপ্রস্তাব আনা যায় না। পরিষদীয় রাজনীতিতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই ধরনের ঘটনায় কখনোই শোকপ্রস্তাব আনা হয়নি।”

    উল্লেখ্য, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিল আনছে রাজ্য। তবে তা মঙ্গলবার। অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে পেশ হবে ‘অপরাজিতা মহিলা ও শিশু (পশ্চিমবঙ্গ ফৌজদারি আইন সংশোধনী) বিল, ২০২৪’। মঙ্গলেই তা নিয়ে আলোচনা হবে এবং বিলটি বিধানসভায় পাশ করিয়ে আইনে পরিণত করতে রাজ্যপালের কাছে পাঠাতে চায় রাজ্য। সোমবার মৌনী মিছিলের পর শুভেন্দু বলেন, “মঙ্গলবার বিধানসভায় মাত্র দু’ঘণ্টা সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। আমাদের ৬০ মিনিট দেওয়া হয়েছে। আমি অল্প বলব, বাকি সব মহিলা বিধায়কেরা বলবেন।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)