‘জনপ্রতিনিধিদের হতে হবে নম্র এবং সহানুভূতিশীল’, ‘ফোঁস’ বিতর্কে মুখ খুললেন ‘সেনাপতি’ অভিষেক
আনন্দবাজার | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ফোঁস বিতর্কে এ বার প্রতিক্রিয়া জানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে যাঁরা ন্যায়বিচারের আন্দোলনে নেমেছেন, তাঁদের যে ভাষায় তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি এবং নেতাদের একাংশ আক্রমণ করতে শুরু করেছেন, এক্স পোস্টে সোমবার তার সমালোচনা করেছেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’।
ওই পোস্টে অভিষেক লিখেছেন, ‘‘দলীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে জনপ্রতিনিধিদের আরও নম্র এবং সহানুভূতিশীল হতে হবে। আমি তৃণমূলের সকলকে অনুরোধ করছি চিকিৎসক বা নাগরিক সমাজের উদ্দেশে কটু কথা না বলার জন্য। প্রত্যেকেরই প্রতিবাদ করার এবং নিজের মত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। এটাই পশ্চিমবঙ্গকে অন্যান্য বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকে আলাদা করেছে। আমরা বুলডোজার মডেল এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের কৌশলের বিরুদ্ধে আন্তরিক ভাবে লড়াই করেছি।’’
ওই পোস্টে আরজি কর-কাণ্ডের উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘‘এই ধরনের ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ করার এখনই সময়। বাংলাকে অবশ্যই এই লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দাঁড়াতে হবে এবং যতক্ষণ না অপরাধীদের শাস্তি হয় এবং রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার উভয়ের দ্বারা একটি ধর্ষণ-বিরোধী আইন প্রণয়ন করা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত থামবে না।’’
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে নাগরিক সমাজের আন্দোলনের বিরুদ্ধে গত কয়েক দিনে তৃণমূলের সাংসদ-বিধায়ক-নেতারা যে ভাবে বিষোদ্গার করে চলেছেন, সেই আবহে অভিষেকের এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, গত ২৮ অগস্ট টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় নেত্রী একটি মন্তব্যের পরেই এই প্রবণতার সূচনা বলে অভিযোগ। মেয়ো রোডে সমাবেশে বক্তৃতা করতে গিয়ে মমতা দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘যে আপনাকে রোজ কামড়াচ্ছে, তাকে কামড়াবেন না। কিন্তু ফোঁস তো করতে পারেন।’’ ঘটনাচক্রে, সে সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অভিষেকও।
মমতার ওই বিতর্কিত মন্তব্যের পরেই বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী, উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ, উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক, অভিনেত্রী তথা সোনারপুরের বিধায়ক লাভলি মৈত্র-সহ তৃণমূলের অনেকেই আন্দোলনকারী চিকিৎসক এবং নাগরিক সমাজকে আপত্তিকর ভাষার আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ। এঁদের মধ্যে কাকলি ইতিমধ্যেই ‘কৃতকর্মের’ জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। অশোকনগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর (তথা বর্তমান কাউন্সিলরের স্বামী) অতীশ সরকার ‘মা-বোনেদের ছবি বিকৃত করে টাঙিয়ে’ দেওয়ার কথা বলে সাসপেন্ড হয়েছেন।
লাভলি বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তুললে সেই আঙুল কী ভাবে নীচে নামিয়ে দিতে হয়, সেটা আমরা জানি! এখনও পর্যন্ত শান্ত আছি।’’ রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন বলেছেন, ‘‘ওরা যদি একটা দংশন করে, তা হলে আমাদের পাঁচটা দংশন করতে হবে। ওরা একটা দাঁত বসালে আমাদের পাঁচটা দাঁত বসাতে হবে।’’ ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ আন্দোলনে যুক্তদের নিশানা করে বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ ‘কুকুরের মতো গুজুর গুজুর, ফুসুর ফুসুর’ করার অভিযোগ তুলেছেন। অভিনেতা-বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক আন্দোলরত জুনিয়র ডাক্তারদের প্রায় নজিরবিহীন ভাষায় কটাক্ষ করে বলেছেন, “ওই চিকিৎসকেরা আন্দোলন করছেন ঠিকই। কিন্তু বোনাস বা প্রভিডেন্ট ফাণ্ড নেবেন তো?’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, নাগরিক আন্দোলনের ‘চাপ’ ক্রমশ বাড়তেই ‘অসংলগ্ন’ কথা বলছেন শাসকদলের ওই নেতা-নেত্রীরা! প্রশ্ন উঠেছে, সেই আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ যখন পাড়ায় পাড়ায় সাধারণ মহিলাদের হাতে চলে যাচ্ছে, তখন কি শাসকের একাংশের স্নায়ু আরও নড়বড়ে এবং অসংলগ্ন হয়ে পড়ছে? যার বহিঃপ্রকাশ সরাসরি হুমকি। এই আবহে ব্যতিক্রমী অবস্থান স্পষ্ট করলেন অভিষেক। বস্তুত, আরজি কর-পর্বের গোড়া থেকেই ধারাবাহিক ভাবে যে নজির রেখে চলেছেন তিনি।