• প্রতিবাদের অন্য রূপ, চালু ‘অভয়া ক্লিনিক’
    বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চালু হল ‘অভয়া ক্লিনিক’। আর প্রথম দিনই এই ক্লিনিকে উপচে পড়ল সাধারণ মানুষের ভিড়। জানা গিয়েছে, এদিন সকাল থেকে মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক পড়ুয়াদের প্রতিবাদ মঞ্চে পরিষেবা দেওয়া শুরু হয়। পরীক্ষামূলকভাবে দুইদিন ব্যাপী এই অভয়া ক্লিনিক চলবে। তবে বুধবার থেকে টানা এই ক্লিনিকের মাধ্যমে পরিষেবা দেওয়া হবে। অভয়া এখনও বিচার পাননি। তার জন্য চলছে তীব্র আন্দোলন। সেই আন্দোলনের মধ্যেই মানুষকে পরিষেবা দিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এদিন শতাধিক মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন। 

    সকাল থেকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের ভিড়। কেউ বাড়ির খুদে সদস্যকে এনেছেন চিকিৎসার জন্য, আবার কেউ বৃদ্ধা মাকে। বেশ কয়েকদিন চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে অনেকেই অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছিলেন। অনেকেই ভেবেছিলেন, আজও হয়তো খালি হাতেই ফিরতে হবে। কিন্তু না,  চিকিৎসক পড়ুয়াদের অভয়া ক্লিনিক চালু হওয়ার পরেই রোগীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। লাইন দিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের থেকে পরামর্শ নিলেন রোগীরা। সোমবার সকালে এমনই দৃশ্য দেখা গেল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। জুনিয়র চিকিৎসকদের এই সিদ্ধান্তে খুশি রোগী ও তাঁদের পরিজনরা। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গিয়েছে শিশুদের বিভাগে। 

    এদিন চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি আন্দোলনও চালিয়ে যান চিকিৎসক পড়ুয়ারা। মঙ্গলবারও তাঁরা আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের নৃশংস খুনের ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নামবেন বলে জানা গিয়েছে।

    এক জুনিয়র চিকিৎসক বলেন, আমরা প্যারালাল ওপিডি খুলে মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। সিনিয়র চিকিৎসকদেরও বলা হয়েছে অভয়া ক্লিনিকে বসার জন্য। আমাদের আন্দোলনে রাজনীতির রং লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই আন্দোলন একেবারে অরাজনৈতিক। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ২৩ দিন ধরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তীব্র আন্দোলন চলছে। দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন পড়ুয়ারা। এরফলে ওপিডি পরিষেবাও ব্যাহত হচ্ছিল। তবে মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করে পরিষেবা চালিয়ে যান। কিন্তু বিপুল পরিমাণে রোগীর সংখ্যা থাকায় হিমশিম খেতে হয় মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে। মূলত সেই কথা মাথায় রেখেই অভয়া ক্লিনিক খোলার সিদ্ধান্ত নেন পড়ুয়ারা। কিছুদিন আগে মানুষের জন্য তাঁদের উদ্যোগে রক্তদান শিবির সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। 

    জানা গিয়েছে, মেডিক্যাল পড়ুয়াদের দাবি, দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত প্রক্রিয়া চালিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে দোষীদের। প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তার ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

    এদিন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন চন্দন মণ্ডল। তিনি বলেন, অবশেষে পরিষেবা পেলাম। এক চিকিৎসক ওষুধ দিয়েছেন। আমরা চাই দোষীরা দ্রুত শাস্তি পাক। সেই সঙ্গে সাধারণ রোগীরাও যাতে সুবিচার পান, সেটা দেখা দরকার। 

    এদিন গরমকে উপেক্ষা করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন কেশপুরের বাসিন্দা আসিফ খান। তিনি বলেন, আমরা কেউ আন্দোলনের বিপক্ষে নই। আন্দোলন তার নিজের মতোই চলুক। কিন্তু আমরা চাই মানুষ পরিষেবা পাক। বেশ কিছুদিন আগেও চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে গিয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ বিপদে পড়ে যাবে। আশা করব, আর যেন চিকিৎসা পরিষেবা এভাবে বন্ধ না হয়ে যায়।
  • Link to this news (বর্তমান)