করা যাবে না সন্দীপ বিরোধী আন্দোলন, ফতোয়া ছিল অভীকের, দাবি জুনিয়রদের
বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: ঘটনার দিন আর জি করে উত্তরবঙ্গ সিন্ডিকেটের অন্যতম মাথা অভীক দে হাজির ছিলেন। ঘটনার দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও তিনি দেখেছিলেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ১১ আগস্ট রাতে এসে তিনি নিজে এমনটা দাবি করেছিলেন বলে জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, অভীক দে আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ‘ক্লিনচিট’ দিতে চেয়েছিলেন। ওই রাতে তিনি বলেন, অধ্যক্ষের কোনও দোষ নেই। বিষয়টি এমএসভিপির দেখার কথা। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। আন্দোলনও করা যাবে না। এমনকী, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত রেপ হয়েছে, এমনটা কেউ বলতে পারবেন না বলে তিনি ফরমান জারি করেছিলেন। যদিও এবিষয়ে অভীকবাবুকে এদিন ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মেসেজ করা হলেও কোনও উত্তর দেননি।
সোমবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা বিক্ষোভ দেখান। পরে তাঁরা কলেজের অধ্যক্ষর সঙ্গে বৈঠক করেন। চিকিৎসক গৌরাঙ্গ প্রামাণিক বলেন, ১১ আগস্ট রাতে অভীক জুনিয়ার চিকিৎসকদের ডেকে পাঠান। তিনি তাঁদের মগজধোলাইয়ের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি জানিয়ে ছিলেন, আন্দোলন করে কোনও লাভ হবে না।
এদিন কলেজে অভীকের ঢোকা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে বলে জুনিয়র ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দেন। তাঁরা বলেন, ওই চিকিৎসক সব কিছুতে ছড়ি ঘোরাতেন। কলেজের সব সিদ্ধান্ত তিনি নিতেন। কে ক্যান্টিন চালাবে, সেটাও তিনিই ঠিক করতেন। গভীর রাত পর্যন্ত কলেজের গেস্টরুমে লোকজন নিয়ে কী করতেন? তা নিয়েও জুনিয়ররা প্রশ্ন তুলেছেন। এক জুনিয়র চিকিৎসক বলেন, কলেজে তিনি দীর্ঘদিন ধরে দাদাগিরি করে আসছেন। তাঁর কথামতো না চললে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিতেন। হাউসস্টাফ কীভাবে নিয়োগ হবে, সেটা তিনি ঠিক করতেন। কথা না শুনলে রেজিস্ট্রেশন আটকে দেওয়া হবে বলে ভয় দেখানো হতো। ক্ষমতার জোরে তিনি একবার কনভোকেশন আটকে দিয়েছিলেন।
অভীকের নিজস্ব সিন্ডিকেট হাসপাতালে রয়েছে। তারা সবটা নিয়ন্ত্রণ করে। পার্টি করার জন্য তারা জুনিয়র ডাক্তারদের কাছ থেকে টাকা আদায় করত।
আইএমএ অনেক আগেই দাবি করেছিল, ঘটনার দিন আরজি করে অভীক হাজির ছিলেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনিই ওই চিকিৎসক। জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, ১১ আগস্ট রাতে কলেজে এসে আরজি করের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে সিবিআইয়ের জেরা করা উচিত বলে চিকিৎসকরা দাবি করেছেন।
বেঙ্গল শাখার আইএমএর যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, তাঁর বাড়বাড়ন্ত শুরু ২০১৮ সাল থেকে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে আরওএমও হয়ে বর্ধমানে যোগ দিয়েছিলেন। মূলত এমডিদের এই পোস্টে দেওয়া হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটের সুযোগ থাকায় তাঁর সেই ডিগ্রি দরকার হয়নি। প্রত্যেক সেমেস্টারে হাজার টাকা নিয়ে উত্তরপত্র দিত। কে কোথায় পোস্টিং পাবে, এই সিন্ডিকেট ঠিক করত। ঘটনার দিন আর জি করে উপস্থিত ছিলেন সেটা আমরা আগেই বলেছিলাম। তাঁকে অবশ্যই হেফাজতে নিয়ে জেরা করা উচিত।