নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: স্রেফ সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের সিলমোহরের অপেক্ষা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মানচিত্রটাই আগামীদিনে বদলে যেতে চলেছে কুপার্স ক্যাম্প এলাকায়। স্বাধীনতার পর থেকে এতদিন পর্যন্ত রানাঘাট ২ ব্লকের মাঝে অবস্থিত এই পুরসভায় নিজস্ব হাসপাতাল বলে কিছুই নেই। রানাঘাট মহকুমার অন্যতম নোটিফায়েড এলাকার মানুষকে চিকিৎসার জন্য ভরসা করতে হয় অনুলিয়ায় রানাঘাট হাসপাতালের উপরেই। সবকিছু ঠিকঠাক চললে, পাকাপাকি সমাধান হতে চলেছে এই সমস্যার। হাসপাতাল তৈরির প্রস্তাব সরকারের উচ্চস্তরে যাচ্ছে জেনে খুশি সেখানকার আমজনতাও।
রানাঘাট মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস কয়েক আগে সরকারি জমি দখলমুক্ত করা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া বার্তা দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশিকা মোতাবেক কাজে নেমে কুপার্স ক্যাম্প এলাকার বিরাট অংশজুড়ে দখল হয়ে থাকা সরকারি জমি খালি করতে সক্ষম হয়েছে প্রশাসন। জায়গাটি কুপার্সের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। পুরসভা ভবনের ঠিক উল্টো দিকেই। কিন্তু বহু দশক ধরে ধীরে ধীরে দখল হয়ে যায় প্রায় ৩ একরের কাছাকাছি সরকারি জমি। দীর্ঘ এই সময়কালের মধ্যে, ওই জমিতে কেউ বানিয়েছেন দোকান, কেউ অস্থায়ী ঘর করে থাকছিলেন, অনেকেই গাড়ি রাখার জন্য স্থায়ী গ্যারেজ বানিয়ে ফেলেছিলেন। এছাড়া ছোট বড় বিভিন্ন কারণে সরকারি জমিটি দখল হয়ে গিয়েছিল। প্রশাসনের দাবি, কাগজেকলমে সেই জমিটির নিখুঁত পরিমাপ ২.৮ একর। প্রথমে একটি নির্দেশিকার মাধ্যমে জমিটি ছেড়ে দেওয়ার কথা জানানো হয় দখলদারদের। অধিকাংশই সেই নির্দেশের পর জমিটি ছেড়ে দিয়ে চলে যান। বাকিদের ইতিমধ্যেই সেখান থেকে সরিয়ে দিতে হয়েছে। তবে এলাকা দখলমুক্ত করতে গিয়ে রীতিমতো সহযোগিতা পেয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা। রাজ্যের অন্যত্র সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে গিয়ে প্রশাসনকে বাধার সম্মুখীন হতে হলেও, কুপার্স ক্যাম্প এলাকায় দেখা গিয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। এরপরেই মহকুমা প্রশাসনের মাথায় আসে, বিরাট এই জমি কী কাজে লাগবে? অভ্যন্তরীণ একটি আলোচনায় দেখা যায়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি করা প্রয়োজন কুপার্স ক্যাম্প এলাকায়। বিশেষত হাসপাতাল না থাকায় এই নোটিফায়েড এলাকার মানুষকে নির্ভর করতে হয় রানাঘাট শহরের উপর। চাপ বাড়ে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের উপরেও। ফলে এই জমিতে একটি পুর হাসপাতাল বা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল অনায়াসেই বানানো যেতে পারে। সেই মোতাবেক রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। তাতে এই বিপুল জমিতে হাসপাতাল তৈরির আবেদন জানানো হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি এবং আর্থিক বরাদ্দ যাওয়া হবে সেই প্রস্তাবে। বিষয়টি নিয়ে রানাঘাটের মহকুমা শাসক রৌনক আগারওয়াল বলেন, আমরা খুব সফলভাবে জমিটি খালি করতে পেরেছি। আপাতত জমিটি যাতে ফের না দখল হয়ে যায়, তার জন্য জমিটি ঘিরে দেওয়া হচ্ছে। আমরা রাজ্যে সরকার বা স্বাস্থ্যদপ্তরের কাছে, জেলাস্তরের প্রস্তাব পাঠাচ্ছি যাতে ওই জমিতে আগামী দিনে হাসপাতাল তৈরি করা যায়। কুপার্স ক্যাম্পের নিজস্ব হাসপাতাল হলে প্রচুর মানুষ উপকৃত হবেন। তাছাড়া হাসপাতালকে কেন্দ্র করে সংলগ্ন এলাকার ব্যবসায়িক চরিত্রটাও বদলে যাবে। অনেকেই স্বনির্ভর হতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, নদীয়া জেলার ‹খুদে› পুরসভা কুপার্স ক্যাম্প। মাত্র ১২টি ওয়ার্ড নিয়ে একটি নোটিফায়েড এলাকা। তার মধ্যেই এই জমিটি ছিল রিফিউজি রিলিফ এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন দপ্তরের। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে সেটি দখল হয়ে যেতে শুরু করে। এই ২.৮ একর জমিতে সরকার হাসপাতাল তৈরির সবুজ সংকেত দিলে উপকৃত হবেন প্রায় ২৫ হাজারের কাছাকাছি মানুষ। কারণ এই বিপুল সংখ্যক মানুষ বর্তমানে এই ছোট্ট পুরসভা এলাকার বাসিন্দা। ছোট থেকে বড়, বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই এখানকার রোগীদের ছুটে আসতে হয় রানাঘাটে। সেক্ষেত্রে খারাপ রাস্তা, রেলগেট সহ একাধিক প্রতিবন্ধকতা থাকে। ফলে ‹দুয়ারে হাসপাতাল› পেলে সেই সমস্যা অনেকটাই মিটবে। মহকুমা স্তর থেকে পাঠানো এই প্রস্তাবে খুশি কুপার্স ক্যাম্প এলাকার অধিকাংশ মানুষ। তাঁরা চাইছেন, সরকার যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতাল তৈরির প্রস্তাবে সায় দিয়ে আর্থিক বরাদ্দ করুক। যে কোনও মাপের হাসপাতাল হলেই কুপার্স ক্যাম্প এবং সংলগ্ন এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মানচিত্রটাই বদলে যাবে। সহজে চিকিৎসা পাবেন রোগীরা।