• মাদ্রাসার ছাত্রকে বেধড়ক মারধর, হাসপাতালে ভর্তি
    বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কান্দি: পড়াশুনায় ফাঁকি। তাই শাসন করতে নাবালক ছাত্রকে মাঝরাতে ঘুম থেকে তুলে পাশের ঘরে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক বেত্রাঘাত করার অভিযোগ উঠল এক মাদ্রাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে। প্রায় দু’ ঘণ্টা ধরে ওই নাবালক ছাত্রের উপর অত্যাচার চলে বলে অভিযোগ। ঘটনাটি বড়ঞা থানার হরিবাটি গ্রামের একটি মাদ্রাসার। অত্যাচারিত ছাত্র রিয়াদ আলি শেখকে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার সেখানেই সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনায় সোমবার ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বড়ঞা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বড়ঞা থানার পুলিস জানিয়েছে, তদন্ত করা হচ্ছে। দোষ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খুবই দুঃস্থ পরিবারের সন্তান ওই ছাত্র। তাই পরিবারের লোকজন তাকে ওই মাদ্রাসায় আবাসিক হিসেবে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলেন। ছাত্রটি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।

    এদিকে রবিবার বিকেলের দিকে ওই ছাত্রকে অসুস্থ অবস্থায় কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন। দেখা যায়, ছাত্রের হাত ও পায়ের বিভিন্ন জায়গায় কালশিটে দাগ পড়ে গিয়েছে। প্রহারের কারণে তার জ্বরও এসে গিয়েছে। ছাত্রের অবস্থার অবনতি দেখে সঙ্গে সঙ্গেই ওকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়। হাসপাতালের বেডে শুয়ে বছর এগারোর রিয়াদ জানায়, আমি পড়া পারিনি। সেই কারণে আসিরুদ্দিন স্যার ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বাঁশের কঞ্চি করে খুব মারে। আমি কাঁদতে থাকলেও মার বন্ধ করেননি। এমনকী ঘটনার কথা কাউকে জানাতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বাড়িতে মাকে বলি।

    ছাত্রের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে মাদ্রাসা থেকে ফোন আসে। তাতে বলা হয় ওই ছাত্রের শরীর খারাপ। তাই ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। এরপর পরিবারের লোকজন ছাত্রকে দুপুরের দিকে বাড়ি নিয়ে আসেন। ছাত্রের বাড়ি ভরতপুর থানার বিন্দারপুর গ্রামে। ছাত্রের মা সারমিনা বিবি বলেন, ছেলের বিকেল থেকেই জ্বর আসে। পরে দেখি গোটা শরীরে কালশিটে দাগ পড়ে গিয়েছে। সব ঘটনার কথা আমাদের জানায়।

    সারমিনা আরও বলেন, ছেলে পড়া পারছিল না বলে শনিবার রাত ১২টা নাগাদ ঘুম থেকে পাশের ঘরে তুলে নিয়ে যায় ওই শিক্ষক। এরপর রাত দুটো পর্যন্ত ওকে মারধর করা হয়। আমি ওই শিক্ষকের বিচার চেয়ে মাদ্রাসার দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কিন্তু বিচার পা‌ই঩নি। তাই পুলিসের দ্বারস্থ হয়েছি।

    এদিকে ওই ঘটনায় সোমবার বড়ঞা থানায় মাদ্রাসার শিক্ষক আসিরুদ্দিন মুফতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ছাত্রের দাদু কদম শেখ। তিনি বলেন, আমার নাবালক নাতিকে যেভাবে মারধর করা হয়েছে তার বিচার চাই। পড়াশোনা না পারলেও কাউকে এভাবে মারধর করা উচিত নয়।

    এদিকে সোমবার ওই মাদ্রাসায় অভিযুক্ত শিক্ষক আসিরুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি প্রথমেই বলেন, পুলিসে অভিযোগ করার প্রমাণপত্র দেখান। 

    পরে বলেন, যা বলার মাদ্রাসা কমিটিকে বলবেন। সংবাদ মাধ্যমে কিছু বলা যাবে না। যদিও মাদ্রাসার পরিচালন কমিটির এক সদস্য বলেন, ছেলেটি পড়াশোনা পারেনি বলে মারধর করা হয়েছে তা নয়। আসলে ছেলেটি কিছু চুরি করেছিল। তাই শাসন করা হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)