• ছাত্র সেজেই আসানসোলের গোবিন্দপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল কুখ্যাত ডাকাত নয়ন
    বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: আশঙ্কাই সত্যি হল! পড়ুয়া পরিচয়ে আসানসোলের গোবিন্দপুরে ঘর ভাড়া নিচ্ছে বহিরাগতরা। এমনই উদ্বেগ ছড়িয়েছিল শহরে। পুলিসের তদন্তে উঠে এল, পড়ুয়া পরিচয় দিয়ে গোবিন্দপুরে ঘর ভাড়া নিয়েছিল বিহারের কুখ্যাত ডাকাত নয়ন কুমার। শুধু ঘর ভাড়া‌ই নেয়নি, এখানে পড়ুয়া সেজে থেকে দুই শাগরেদ নিয়ে এলাকায় রেকি করেছিল সে। বাড়ির মালিকের উপর ভাড়াটিয়ার চড়াও হওয়ার ঘটনার তদন্তে নেমে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিস। আসানসোল উত্তর থানার পুলিস তদন্ত করে পাটনা থেকে গ্রেপ্তার করেছে নয়ন কুমারকে। তার দুই সঙ্গীর খোঁজ চলছে। উল্লেখ্য, কোনও পরিচয়পত্র ছাড়াই গোবিন্দপুরে পড়ুয়া সেজে ঘর ভাড়া পাওয়া যায়। সেই সুযোগকেই দুষ্কৃতীরা কাজে লাগাচ্ছে বলে দাবি পুলিসের। 

    ডিসি (সেন্ট্রাল) ধ্রুব দাস বলেন, পড়ুয়া পরিচয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে নয়ন ডাকাতির জন্য রেকি করছিল। আমরা তাকে বিহার থেকে গ্রেপ্তার করেছি। পাটনা থেকে ট্রানজিট রিমান্ডে নয়নকে এ রাজ্যে নিয়ে আসা হয়। এদিন অভিযুক্তকে আসানসোল আদালতে হাজির করানো হয়। আদালত নয়নের ১০ দিনের পুলিস হেফাজত মঞ্জুর করেছে। গোবিন্দপুরের বাসিন্দারা যাতে পরিচয়পত্র ছাড়া বাড়ি ভাড়া না দেন সেই জন্য এলাকায় টোটো করে মাইকিং করানো হচ্ছে। 

    সম্প্রতি গোবিন্দপুরে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। এক বাড়িতে পড়ুয়া পরিচয়ে ঘর ভাড়া নিয়েছিল এক ব্যক্তি। ওই বাড়ির মালিকের ছেলে অজয়কুমার দেবনাথ তার কাছে পড়ুয়ার পরিচয়পত্র দেখতে চান। ভাড়াটিয়া তা দেখাতে অস্বীকার করে। এরপর তাকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলা হয়। প্রথমে যেতে না চাইলেও প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে ওই ভাড়াটিয়াকে বের করে দেওয়া হয়। কিছুদিন পরই ওই বাড়িতে দুই সঙ্গীকে নিয়ে চড়াও হয় বিতাড়িত ওই ভাড়াটিয়া। মালিককে ব্যাপক মারধর করে তাঁর গলার চেন ছিনতাই করে। প্রতিবেশীরা বাধা দিতে এলে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে পালায়। এই ঘটনার অভিযোগ পেয়ে জোরকদমে তদন্তে নামে পুলিস। সিসি ক্যা঩মেরার ফুটেজ থেকে ও গোপন সূত্রে তারা খবর পায়, এই ভাড়াটিয়া পড়ুয়া নয়, পার্শ্ববর্তী রা঩জ্যের দুষ্কৃতী। বেড়ে যায় মামলার গুরুত্ব। পুলিসের শীর্ষ আধিকারিকরা তদন্তে যুক্ত হন। তখনই জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে ঘর ভাড়া নিয়ে ডাকাতির ছক কষছিল নয়ন। গোবিন্দপুর থেকে সে এলাকা রেকি করতে বের হতো। সর্বক্ষণ তার সঙ্গে দু’জন থাকত। এরপরই তাকে ধরতে বিহারে অভিযানে যায় পুলিস। পাটনা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

    রাজ্যের একাধিক ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে আসানসোলের। শিল্পাঞ্চলেও একাধিক বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সেখানেও ডাকাতরা মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে রেকি করেছে। তবে পড়ুয়া পরিচয় দিয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে রেকি করার মতো ঘটনার কথা সাম্প্রতিক অতীতে শোনা যায়নি। 

    এখন পুলিস নিশ্চিত হতে চাইছে নয়নই এই ডাকাত দলের পান্ডা, নাকি তাকে পড়ুয়া সাজিয়ে শিল্পাঞ্চলে পাঠিয়েছিল কোনও চক্র। আসানসোলের জুবলি মোড়ের অদূরে আসানসোল উত্তর থানার গোবিন্দপুর। কাছেই রামকৃষ্ণ মিশন, আইটিআই, ইএসআই হাসপাতালের নার্সিং কলেজ সহ একাধিক বড় বেসরকারি কলেজ। 

    পড়ুয়ারা এই এলাকাতেই কেউ পেয়িং গেস্ট, কেউ ঘর ভাড়া নিয়ে মেস করে থাকে। কিছুদিন ধরেই এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করছিলেন, পড়ুয়া পরিচয়ের আড়ালে নানা বয়সের বহিরাগতরা ভিড় জমাচ্ছে এখানে। কিছু বাড়ির মালিক বাড়তি ভাড়ার লোভে পরিচয়পত্র না দেখেই বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন। সেই সুযোগে এক ডাকাতের আত্মগোপন করে থাকার ঘটনার পর বাসিন্দাদের সচেতনতা বাড়ে কিনা সেটাই দেখার।
  • Link to this news (বর্তমান)