• মোটা টাকা বকশিসের লোভে পাচারে জড়াচ্ছে যুবরা, লালগোলায় গ্রেপ্তার ৩
    বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, লালবাগ: পুলিসের নজর এড়িয়ে সীমান্তের কারবারির কাছে পৌঁছে দিলেই মিলছে মোটা টাকা বকশিস। সহজে টাকা রোজগারের এই টোপে পা দিয়েই মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছে মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী এলাকার দরিদ্র পরিবারের কিশোর থেকে যুবকরা। রবিবার রাতে লালগোলা থানার পীরতলা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় নাকা তল্লাশি চালানোর সময় পুলিস তিন যুবককে গ্রেপ্তার করে। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতদের নাম রাজেশ শেখ, তসিকুর আহমেদ ও সোহবুল শেখ। তিনজনেই লালগোলা থানা এলাকার বাসিন্দা। তাদের কাছ থেকে মোট ১২০ বোতল নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ধৃতদের সোমবার বহরমপুরে মাদক সংক্রান্ত বিশেষ আদালতে তোলা হলে বিচারক সাতদিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দেন।

    ভগবানগোলার এসডিপিও উত্তম গড়াই বলেন, ধৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে, লালগোলার মালতিপুরের এক মাদক কারবারি ধৃতদের কাশির সিরাপের বোতলগুলি সীমান্তের এক কারবারিকে পৌঁছে দিতে বলেছিল। অপারেশন সফল হলে তাদের দেওয়া হতো কয়েক হাজার টাকা। সেইমতো ওই তিন যুবক একটি বাইকে চেপে নির্দিষ্ট ঠিকানার উদ্দেশে যাচ্ছিল। পীরতলা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় তিনজনকে আটক করে তল্লাশি চালানোর সময় মোট ১২০ বোতল কাশির সিরাপ বাজেয়াপ্ত করা হয়। তিনটি মোবাইল ও একটি বাইকও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাদের জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে এই চক্রে কারা যুক্ত রয়েছে। কাকে তারা কাশির সিরাপ পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

    লালগোলা থানার পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন যুবক সদ্য মাদক কারবারের ক্যারিয়ার হিসেবে হাত পাকাতে শুরু করেছিল। সোর্স মারফত বিষয়টি জানার পরই তাদের উপর নজরদারি চালানো হচ্ছিল। লালগোলা থানার এক পুলিস আধিকারিক বলেন, সোর্স মারফত খবর ছিল পীরতলা স্টেশন সংলগ্ন সড়ক দিয়ে মাদকদ্রব্য পাচার হবে। সেইমতো ওইদিন সন্ধ্যা থেকে নাকাতল্লাশি শুরু হয়। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তিন যুবক বাইকে চেপে সীমান্তের দিকে যাচ্ছিল। তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতেই কথাবার্তায় অসঙ্গতি দেখা যায়। তিনজনের কাছে থাকা স্কুল ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে মোট ১২০ বোতল কাশির সিরাপ বাজেয়াপ্ত করা হয়। এছাড়া গত ১২ আগস্ট লালগোলার কৃষ্ণপুর গ্রামীণ হাসপাতাল সংলগ্ন আমবাগান থেকে ১২০০ গ্রাম হেরোইন সহ পুলিস চার যুবককে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের মধ্যে তিনজন পরিযায়ী শ্রমিক এবং একজন ট্রাক্টর চালক ছিল। মোটা টাকা বকশিসের লোভে ওই চার যুবক মাদকদ্রব্য স্থানীয় কারবারিকে হাত বদলের জন্য এসেছিল। টাকার লোভে সীমান্তবর্তী এলাকার কিশোর থেকে যুবসমাজ মাদক কারবারের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি পুলিস কর্তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।

    এদিকে রবিবার লালগোলার আটরশিয়া সীমান্ত এলাকা থেকে দু’কেজি মাদক জাতীয় পাউডার বাজেয়াপ্ত করে বিএসএফ। ওই ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাতে কর্তব্যরত জওয়ান কয়েকজন চোরাচালানকারীকে সীমান্তের দিকে যেতে দেখেন। পিছু ধাওয়া করলে তারা অন্ধকারে গা-ঢাকা দেয়। পরে জওয়ানরা তল্লাশি চালিয়ে দুই কেজি মাদক জাতীয় পাউডার বাজেয়াপ্ত করেন। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের জনসংযোগ আধিকারিক বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে বিএসএফ কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। ফলে এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতরা তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে পারছে না।
  • Link to this news (বর্তমান)