• আন্দোলন না দুর্ভোগ মানুষের? লালবাজার অভিযানে অচল তিলোত্তমা
    বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘স্লোগান, মিটিং, মিছিলে জাস্টিস মিলবে তো?’ প্রশ্নটা উড়ে এল বাস থেকে। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ-মহাত্মা গান্ধী রোড ক্রসিংয়ে আধঘণ্টার উপর দাঁড়িয়ে থাকার পর বিরক্তি আর চেপে রাখতে পারলেন না ভদ্রলোক। পেশায় সেলসম্যান। অ্যাপয়েন্টমেন্টের টাইম পেরিয়ে গিয়েছে আধ ঘণ্টা। এখান থেকে ধর্মতলা হেঁটে যেতে যা সময় লাগবে, তার থেকে বাড়ি ফিরে যাওয়া ভালো। কলেজ স্ট্রিটে অটোয় বসে বহুক্ষণ উসখুস করছিলেন শুচিস্মিতা কর্মকার। বারবার চোখ যাচ্ছিল ঘড়িতে। ট্রেন তো আর মিছিলের জন্য থেমে থাকবে না! শেষে বলেই ফেললেন, ‘মিটিং-মিছিল শুধুই দেখনদারি। কোনও দিশা পাওয়া যাচ্ছে না। রোজ নিত্যনতুন গল্প। দোষীদের শাস্তি কবে হবে, সেটা বলুক দেখি!’

    আন্দোলন চলছে। মিছিল, রাত জাগা, ধর্নামঞ্চ... নানাবিধ কর্মসূচি। যে প্রতিবাদ ‘অভয়া’র বিচারের নামে শুরু হয়েছিল, তার এখন নানা অভিমুখ। কীভাবে ‘জাস্টিস’ মিলবে? কী সেই জাস্টিস? সোমবার জুনিয়র ডাক্তারদের লালবাজার অভিযান বলল, ‘সিপির পদত্যাগ’। এটাই আজকের অভিমুখ। কলেজ স্কোয়্যার থেকে শুরু হওয়া আড়াই ঘণ্টার অভিযানে স্তব্ধ হল তিলোত্তমার প্রাণকেন্দ্র। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, এমজি রোড, কলেজ স্ট্রিট, শিয়ালদহ, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট—থমকে গেল কলকাতা। এক একটা পয়েন্টে গণপরিবহণ দাঁড়িয়ে থাকল ৪০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। আর ক্ষোভ বাড়ল মানুষের। বিস্ফোরণের সুর একটাই—‘এভাবে জাস্টিস মিলবে তো?’

    নামেই অরাজনৈতিক মিছিল। কিন্তু তাতে দেখা গেল বিজেপির মার্কামারা সৈনিকদের। স্লোগানের ধারাও গেরুয়া কর্মসূচি থেকে ধার করা। মাথা তুললেন টুম্পা ও মৌসুমি কয়াল। কয়েকদিন আগেই তাঁদের বিজেপিতে যোগ দিতে দেখা গিয়েছিল। জ্বলল কলকাতার পুলিস কমিশনার বিনীত গোয়েলের কুশপুতুল। ডাক্তারদের মধ্যে থেকে না হলেও আশপাশের বাস-ট্যাক্সি থেকে শোনা গেল প্রশ্ন, ‘সিবিআই এত সময় নিচ্ছে কেন?’ কর্মবিরতি জারি রাখা ডাক্তারদের মঞ্চ থেকে আওয়াজ উঠল, দফা এক, দাবি এক, মমতার পদত্যাগ। এটাই কি অরাজনৈতিক মিছিল? উত্তর মিলল না। আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র ডাক্তার অনিকেত মাহাত শুধু বললেন, ‘ওরা আমাদের মিছিলে হাঁটেনি। আমরা কেউ আমন্ত্রণও জানাইনি।’ 

    বসে পড়লেন আন্দোলনকারীরা বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটেই। কারণ, ১৬৩(১) ধারা জারি থাকায় লালবাজার পর্যন্ত পৌঁছতেই পারলেন না তাঁরা। ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘কোনও প্রতিনিধি দল লালবাজারে যেতে চাইলে আমরাই নিয়ে যেতে পারি। কিন্তু আইন মোতাবেক ব্যারিকেড খোলা সম্ভব নয়।’ আন্দোলনকারীদের তরফে কিঞ্জল নন্দের কথায়, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছি। সেক্ষেত্রে কমিশনার এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করুন।’ 

    অবস্থান ওঠেনি। সন্দীপ ঘোষের গ্রেপ্তারির খবর আসার পরও নয়। সিপিও অবশ্য এসে দেখা করেননি তাঁদের সঙ্গে। জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়ে দিয়েছেন, আন্দোলন থামবে না। কেন? ‘সিপিকে আগে পদত্যাগ করতে হবে।’ মনে পড়ছিল ওই বাসযাত্রীর প্রশ্ন, ‘দাদা, লালবাজার অভিযান কেন হচ্ছে? তদন্ত করছে তো সিবিআই।’
  • Link to this news (বর্তমান)