• দোকানে নতুন স্টক, মাস পড়তেই চাঙ্গা পুজোর বাজার
    বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ধর্মতলা চত্বরে পুজো-বাজার করতে এলে, একবার শ্রীলেদার্সের নতুন কালেকশন ঘুরে দেখা ‘মাস্ট’। সোমবার বিকেলে নিউ মার্কেট চত্বরে জাঙ্ক জুয়েলারি দেখছিলেন রমিতা চট্টোপাধ্যায়। হাতে জামাকাপড়ের প্যাকেটের সঙ্গে রয়েছে শ্রীলেদার্সের ব্যাগও। পুজোর তো এখনও মাসখানেক দেরি। এখনই শপিংয়ে? বেসরকারি হাসপাতালের নার্স রমিতাদেবীর কথায়, ‘বোনাস এখনও হয়নি ঠিকই। কিন্তু আজই মাইনে পেয়েছি। মর্নিং শিফ্ট শেষে একবার ঘুরে গেলাম। সালোয়ার কামিজের ছিট যদি এখনই না কিনি, তাহলে তো দর্জি এরপর আর নিতে চাইবে না! ফেরার পথে জুতো দেখতে এসেছিলাম। পছন্দ হয়ে গেল, কিনে নিলাম!’

    আর জি কর নিয়ে প্রতিবাদ-আন্দোলনের আঁচ পড়েছিল খুচরো কেনাকাটায়। পুজোর আগে বিক্রিবাটার দিকে তাকিয়ে যাঁরা বারো মাস দোকান খোলেন, তাঁদের চিন্তার অন্ত ছিল না। দুশ্চিন্তা একেবারে উবে যায়নি। কিন্তু একটু হলেও স্বস্তি ফিরেছে। কারণ, ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে বাজার। বিক্রেতারা বলছেন, যদি আন্দোলনের আঁচ একটু কম হতো, তাহলে বিক্রি আরও বাড়ত।

    ঩নিউ মার্কেটে ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেবু ভট্টাচার্যের কথায়, আর জি করের ঘটনার নিন্দা না করে থাকা যায় না। তার নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়েছে। তবে এবার বড় প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতা। সেদেশের ক্রেতারা অনেক কম আসছেন। দোকানদাররা তাতে বেশ হতাশ। তবু প্রত্যেকেই নতুন স্টক তুলেছেন। ক্রেতারাও ভিড় জমাচ্ছেন। আশা করছি, এ মাস থেকেই আমরা ভালো কেনাবেচা করতে পারব। কারণ এবারে জামাকাপড়ের দাম বিশেষ বাড়েনি।

    দামের ব্যাপারে আশার কথা শুনিয়েছে প্রিয়গোপাল বিষয়ীও। এখানকার বেনারসির সুনাম সর্বত্র। কর্ণধার সৌম্যজিৎ লাহার কথায়, বেনারসির দাম এবার কিন্তু বাড়েনি। অন্যান্য সিল্কের দামও একই আছে। বরং, গত বছর দক্ষিণ ভারতীয় যে সিল্কগুলি ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল, এবার তা ৪ হাজার ৮০০ টাকাতেও মিলছে। তিনি আরও বলেন, ‘পুজো বাজার উপলক্ষ্যে ক্রেতারা কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন। ছুটির দিনে ভিড় বাড়ছে। দূরের বহু ক্রেতা বিয়ের কেনাকাটাও সেরে নিচ্ছেন।’ এখনও যাঁরা ইতস্তত করছেন, শীঘ্রই তাঁরা বাজারমুখী হবেন, আশাবাদী সৌম্যজিৎবাবু।

    দাম নিয়ে একই কথার প্রতিধ্বনি শ্যামবাজারের বনেদি প্রতিষ্ঠান বেনারসি টেক্সটোরিয়ামের কর্ণধার তাপস ব঩ন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও। তিনি বলেন, ‘আমরা যে নতুন স্টক তুলেছি, তাতে দাম কমে গিয়েছে। গত কয়েক বছরে বাজারে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল ঢাকাই জামদানি। এবার সেখানে এসেছে বাংলাদেশি কটন। নতুন ফ্যাশন। দাম ১২০০ থেকে দু’হাজারের মধ্যে। সেমি কাতান বা জর্জেট বেনারসির মতো রাজকীয় শাড়ির দাম ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে শুরু। অনেকে তাই বাজেট কিছুটা বাড়িয়ে কুপারম সিল্ক, অ্যালবাম সিল্কের মতো একেবারে নতুন শাড়ি কিনছেন। 

    আর জি কাণ্ডের প্রভাব পড়ছে? তাপসবাবুর কথায়, যেদিন শ্যামবাজার, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে জমায়েত বা মিছিল হচ্ছে, সেদিন ক্রেতা একটু কম হচ্ছে। কিন্তু বাকি দিনে পুজোর কেনাকাটা চলছে। হাতিবাগানে এসে গিয়েছে জামা, চুড়িদার, ছোটদের পোশাক, পাঞ্জাবির নতুন সম্ভার। ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক অমলকুমার দাস জানিয়েছেন, অনেক ব্যবসায়ীই নতুন মাল তুলেছেন। তবে লাগাতার আন্দোলন না চললে বিক্রিবাটা আরও বাড়ত।
  • Link to this news (বর্তমান)