• ভাঙা হাত-ফাটা মাথা দেখেও ভর্তি নিল না আর জি কর, কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতাল ছাড়লেন পরিজনরা
    বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পথ দুর্ঘটনায় হাত ভেঙেছে, মাথা ফেটেছে। তবুও ভর্তি  না করে ফিরিয়ে দিল আর জি কর। সামান্য চিকিৎসাটুকুও করা হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের। কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতাল ছাড়লেন দুর্ঘটনাগ্রস্থের অসহায় বাড়ির লোকেরা। 

    সোমবার সকালে এই ছবি দেখে আতঙ্কে আর জি কর হাসপাতালে অপেক্ষারত অন্যান্য রোগী ও তাঁদের পরিজনরা। এরকম ঘটনা একটি নয়। পায়ের অপারেশনের জন্য ভর্তি হওয়ার কথা ছিল এক রোগীর। তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ উঠল। আর জি কর শুধু নয়। একই ছবি দেখা গেল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এস এস কে এমেও। পেটে জল জমেছে এক রোগীর। তাঁকে নিয়ে ইমারজেন্সিতে এসেছিলেন পরিজনরা। এই রোগীকে সোজা রেফার করা হল এম আর বাঙুর হাসপাতালে। পাশাপাশি শ্বাসকষ্টের জটিল রোগ নিয়ে আসা রোগীকেও রেফার করা হল অন্য হাসপাতালে। সবমিলিয়ে চিকিৎসা না পেয়ে আতঙ্কগ্রস্ত রোগীদের অসহায় অবস্থা চোখে পড়ল সর্বত্র। 

    ভাঙরের বাসিন্দা সরিফুল গাজি। সোমবার নিউটাউনের সাপুরজি এলাকায় একটি গাড়ি ধাক্কা মারে তাঁকে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে এলাকারই একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে আসেন আত্মীয়রা। তাঁদের অভিযোগ, ইমারজেন্সিতে কোনও চিকিৎসক তাঁকে দেখেনি। হাত ভাঙা, মাথা ফাটা অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও রেফার করে দেন। এর পাশাপাশি জানা গিয়েছে, বিরাটির বাসিন্দা সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ের অপারেশন হওয়ার ডেট ছিল এদিন। কিন্তু অপারেশনের দিন বারবার পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এদিন তাঁকেও আর জি কর থেকে ভর্তি না হয়ে ফিরতে হয়েছে। সুজাতাদেবী বলেন, ‘গত মাসে অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই ঝামেলার মধ্যে তা হয়নি। এই মাসে আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এদিনও হাসপাতাল জানাল, আপাতত কোনও অপারেশন হবে না। তাই ভর্তিও করা হবে না।’ 

    এর পাশাপাশি এস এস কে এমেও দিনভর ভোগান্তির ছবি ধরা পড়েছে। অভিযোগ, ভবানীপুরের বাসিন্দা পাপ্পু দাসকে প্রায় দু’ঘণ্টা পিজির ইমারজেন্সির সামনে অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে থাকতে হয়েছে। পাশে বসে তাঁর স্ত্রী সুনিতাদেবী। তিনি বলেন, ‘ওঁর পেটে জল জমে যাচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কিন্তু খরচ টানতে না পেরে এখানে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এতক্ষণ শুইয়ে রাখার পর জানাল, বেড নেই। ভর্তি নেওয়া হবে না। টালিগঞ্জে বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলল। আর কত দিন এই অবস্থা চলবে জানি না। একজনের বিচার চাইতে গিয়ে অন্যদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।’ একই বক্তব্য হাওড়ার মন্দিরতলার বসিন্দা শুভ্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘সকালে মাকে নিয়ে এসেছি। ইমারজেন্সিতে ঢুকিয়ে রেখে দিয়েছে। মায়ের শ্বাসকষ্টের জটিল অসুখ রয়েছে। কোনওভাবেই অক্সিজেন খোলা যায় না। এই অবস্থায় এখন বাঙুরে রেফার করে দিয়েছে। পিজিতেই যদি এই অবস্থা হয়, বাঙুরে কী হবে বলুন তো! চিকিৎসা ব্যবস্থার হাল দেখে আশঙ্কা হচ্ছে, বিনা চিকিৎসায় মা মারা যেতে পারেন।’ বলতে বলতে চোখে জল শুভ্রাদেবীর। 

    এদিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেও দুর্ভোগের ছবি একইরকম ছিল। দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়ে আউটডোরে পৌঁছে চিকিৎসককে দেখাতে হয়েছে। সুকুমার দাস, কবিতা রায় নামে দু’জন বললেন, ‘ভিতরে ডাক্তার কম। তাই রোগী দেখতে দেরি হচ্ছে। ফলে লম্বা লাইন। দেড় ঘণ্টা লাইনের দাঁড়ানোর পর চেকআপ করাতে পারলাম।’ অন্যান্য রোগীদের বক্তব্য, ‘জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন করছেন। হাসপাতালে রোগী না দেখে রাস্তায় ক্যাম্প করছেন। সরকারি হাসপাতালে দিনে হাজার হাজার রোগী আউটডোরে আসেন। তাঁদের অধিকাংশের কাছে স্মার্টফোন থাকে না। টেলিমেডিসিনের সাহায্যে ক’জন চিকিৎসা নিতে পারেন? গরিব মানুষের কথা কেউই ভাবে না।’
  • Link to this news (বর্তমান)