• যোগাযোগই হচ্ছে না বাড়ির লোকের সঙ্গে, দমদম জেলে কর্মীদের উপর চোটপাট বাংলাদেশি বন্দিদের
    বর্তমান | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: গুলি চলেছে। অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। দেশ অশান্ত হয়ে উঠেছিল। কারাগারের বসেও খবরগুলি কানে এসেছিল বন্দিদের। তারপর থেকে পরিবারের চিন্তায় উদ্বেগে নাওয়াখাওয়া প্রায় ছেড়ে দেওয়ার জোগাড়। ভারতে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি শতাধিক বাংলাদেশি বন্দি। এদেশে বসে বাংলাদেশে থাকা নিজের পরিবারের সংবাদ জানতে চিঠি লিখেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, কেমন আছে সবাই। দীর্ঘসময় কেটে যাওয়ার পরও সে চিঠির উত্তর আর আসে না। ফলে উদ্বেগ আরও বাড়ে। জেল কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার চিঠির উত্তর এল কি না জানার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশে বাড়ির লোকজন সম্পর্কে তাঁদের কাছে কোনও খবর আছে কি না? জানার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সদুত্তর মিলছে না। জেলকর্মীরা তাঁদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। এ ছাড়া বিশেষ কিছুই করতে পারছেন না। ফলে ক্রমাগত দুশ্চিন্তায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশিদের একাংশ। জানা গিয়েছে, এক এক সময় মেজাজ হারিয়ে চোটপাটও করে ফেলছেন জেলকর্মীদের উপর। তবে নিরাপত্তারক্ষীরা সংবেদনশীলতার সঙ্গেই সামলাচ্ছেন পরিস্থিতি। কর্মীদের একাংশ বন্দিদের জানিয়েছেন, তাঁদের পাঠানো চিঠির প্রত্যুত্তরে কোনও চিঠি এলেই দ্রুত সেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

    আদালত ও সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, বেআইনি অনুপ্রবেশ সহ নানা কারণে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন বহু বাংলাদেশি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভুল করে ভারতের জলসীমায় ঢুকে পড়ার কারণেও নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে গ্রেপ্তার হন বহু বাংলাদেশি। তাঁদের মধ্যে অনেকে আদালতের নির্দেশে বর্তমানে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি। তাঁদের বিচার চলছে রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে। কেউ কেউ সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলও খাটছেন। কারও কারও সাজা শেষ হওয়ার মুখে। এখন তাঁদের ঠিকানা জেল হাজত। কারাগারে বসে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, রংপুর, ঢাকা, খুলনা, যশোর সহ বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দা এই বন্দিরা নিজের দেশের পালাবদলের ঘটনার সময় চরম উদ্বিগ্ন হয়ে চিঠি লিখেছিলেন পরিবারকে। সেই চিঠির কোনও উত্তর না আসার ফলেই বাড়ছে উদ্বেগ। কোনও বাংলাদেশি বন্দি একরাশ দুঃখ নিয়ে তাঁর বাবা‑মা’কে লিখেছিলেন, ‘বাড়ির অবস্থা কেমন? সব ঠিকঠাক আছে তো? ধানের গোলা, চাষবাস ঠিক চলছে তো? বাড়ির জিনিসপত্র অক্ষত তো?’ কোনও বন্দি স্ত্রীকে লিখেছিলেন, ‘বাবা‑মা, তুমি কেমন আছো? বাচ্চা দুটো ঠিক আছে তো?’ কোনও বন্দি তাঁর ভাইকে লিখেছিলেন, ‘অসুস্থ বাবা ঠিক মতো ওষুধ খাচ্ছে তো? আমাদের এলাকার অবস্থা কেমন? পাশের পাড়ার লোকজনের অবস্থা এখন কেমন?’ কোনও বাংলাদেশি বন্দি বোনকে লিখেছিলেন, ‘বাড়ির সকলের খবর চিঠি পাওয়া মাত্র যেন উত্তর লিখে জানানো হয়।’ এমন অজস্র আবেগমথিত চিঠি পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশি বন্দিরা। সে চিঠির উত্তরের আশায় অধীর আগ্রহে এখন অপেক্ষা করছেন অন্য দেশের এক গারদের পিছনে। 
  • Link to this news (বর্তমান)