সরকারি প্রস্তাবে নেই, বিধানসভায় নির্যাতিতার জন্য শোক শুভেন্দুদের
আনন্দবাজার | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নিহত চিকিৎসক-ছাত্রীর প্রতি শোকজ্ঞাপনও বিধানসভার ইতিহাসে ব্যতিক্রমী হয়ে রইল! পরিষদীয় বিধির কারণে সরকার পক্ষ শোক প্রস্তাবে নির্যাতিতার প্রসঙ্গ আনতে সম্মত হয়নি। তাই নির্দিষ্ট সূচি শেষ হওয়ার পরে অধিবেশনকক্ষেই নিহত চিকিৎসকের প্রতি শোক জানিয়ে নীরবতা পালন করলেন বিরোধী দল বিজেপির বিধায়কেরা।
‘বিচার’ চেয়ে আলোড়নের মধ্যে নিহতের প্রতি শোকজ্ঞাপন নিয়েও শাসক ও বিরোধীদের মতপার্থক্য প্রকট হয়ে গিয়েছে সোমবার। বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনের প্রথম দিনে প্রথামাফিক শোকপ্রস্তাবের সূচি নির্ধারিত ছিল। সাধারণত দু’টি অধিবেশনের মধ্যে রাজনীতি-সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের বিশিষ্টদের প্রয়াণে আনুষ্ঠানিক ভাবে শোকপ্রকাশ করা হয়। এই ক্ষেত্রে কেবল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নামে শোকপ্রস্তাব পাঠের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তা নিয়েই আপত্তি জানায় বিরেধী বিজেপি।
পরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “স্পিকার বলেছেন, আপনি নাম বলুন। আমরা বলেছি, আপনি ৯ অগস্ট আর জি করে কর্মরত চিকিৎসক হিসেবে উল্লেখ করে শোকপ্রস্তাব নিয়ে তা ওঁদের বাড়িতে পাঠান। কিন্তু তাঁরা তা মানেননি। এই সরকার ধর্ষণ-খুন সংগঠিত করেছে। তাই রাজ্য সরকারকে রক্ষা করতে গিয়ে বিরোধী দলনেতার অনুরোধ খারিজ করে দিয়েছেন (স্পিকার)।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘এ বার চূড়ান্ত লড়াই। নারী-বিরোধী, অত্যাচারী সরকারকে সরে যেতেই হবে। আমাদের ‘সাসপেন্ড’ করুন, মাইনে বন্ধ করুন! কিন্তু আমরা আমাদের বোন-মেয়ের বিষয়ে আপস করব না।” জবাবে পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘আইনত মৃতার নাম করা যায় না। আর কারও নাম ছাড়া প্রস্তাব তৈরি বা পাঠ সম্ভব নয়।’’ সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘‘সরকার ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, এ কথা অবাস্তব। এর জবাব হয় না।’’
ধর্ষণ রুখতে কঠোর আইন করতে দু’দিনের এই অধিবেশন ডেকেছে সরকার পক্ষ। সেই বিলটি আজ, মঙ্গলবার পেশ করার কথা আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের। সেই সূত্রেই এ অধিবেশনের প্রথম দিন সভার শুরুতে শোকপ্রস্তাব দেখেই এই প্রসঙ্গে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। কিন্তু স্পিকার তাঁকে থামিয়েই বুদ্ধদেবের জন্য শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন। এই সময়ে শুভেন্দু আর জি করের মৃতার প্রতি শোকপ্রকাশের বিষয়টি উত্থাপন করেন। কিন্তু স্পিকার জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কারণে এই রকম ঘটনায় মৃতার নাম প্রকাশ করা যায় না। সে ক্ষেত্রে নাম ছাড়া এ ভাবে শোক প্রকাশ করা যায় না।
শোক প্রকাশের গম্ভীর পরিবেশেও বিরোধী দলনেতা বলতে উঠলে সরকার পক্ষ থেকে তাঁর উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘বস্!’ তা শুনে বিরোধী বেঞ্চে উত্তেজনা শুরু হয়ে যায়। শুভেন্দু বলতে থাকেন, ‘‘বস্! কী মুখের ভাষা! এখানেও তুই-তোকারি চালাবেন?’’ সরকার ও বিরোধী পক্ষের বিধায়কেরা পরস্পরের উদ্দেশে নিজেদের বক্তব্য ছুড়ে দিতে থাকেন।
স্পিকার অবশ্য প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নীরবতা পালনের পরে এ দিনের মতো সভা মুলতুবি করে দেন। তার পরে সরকার পক্ষের বিধায়কদের সভাকক্ষ ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করেন শুভেন্দু-সহ বিজেপি বিধায়কেরা। তাঁরা বেরিয়ে গেলে বিজেপি বিধায়কেরা নিহতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে বেরিয়ে আসেন। কালো উত্তরীয় পরে, হাতে মোমবাতি নিয়ে মূল ভবনের বাইরে মৌনী মিছিল করেন তাঁরা।
আর জি কর কাণ্ডে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে এ দিনই রাজ্য জুড়ে জেলাশাসকের দফতরে অভিযান ছিল বিজেপির। সেই কর্মসূচিতে জেলায় জেলায় বেধেছে ধুন্ধুমার। পুলিশ-বিজেপি কর্মীদের খণ্ডযুদ্ধে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কোচবিহার। দুপুরে জেলাশাসকের অফিসের সামনে আধ ঘণ্টা দু’পক্ষের লড়াই চলে। পুলিশ প্রথমে জলকামান ব্যবহার করে। পরে লাঠি চালানো হয়েছে বলেও দাবি। পাল্টা বিজেপি কর্মীরা ইট-পাথর ছোড়েন। পুলিশ সুপারের অফিস লক্ষ করেও পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। অন্তত ২০ জন বিজেপি কর্মী জখম হন। কয়েক জন পুলিশ-কর্মীও চোট পান। অভিযানে ছিলেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক, তুফানগঞ্জের বিজেপি বিধায়ক মালতী রাভা। নিশীথ ও মালতী-সহ কয়েক জনকে আটক করা হয়। আলিপুরদুয়ারেরও পুলিশকে লক্ষ করে ইটবৃষ্টির অভিযোগ ওঠে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। পাল্টা জল কামান, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। আসানসোল, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াতেও পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের বচসা ও ধস্তাধস্তি বাধে।