এই সময়: পাটুলি থেকে উল্টোডাঙা। প্রায় ১৭ কিলোমিটার রাস্তা। আরজি করের ঘটনার বিচার চেয়ে আজ, বিকেল ৫টা থেকে কার্যত গোটা ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস জুড়ে মানববন্ধনের ডাক দিলেন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। পাটুলি, অজয়নগর, মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি, রুবি মোড়, সায়েন্স সিটি, চিংড়িঘাটা, মনি স্কোয়্যার — সাতটি পয়েন্ট থেকে এই ‘হিউম্যান চেন’ শুরু করার ডাক দেওয়া হয়েছে। স্মরণকালের মধ্যে কোনও প্রতিবাদ মিছিলে এত বড় মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়নি।একই সঙ্গে জারি রয়েছে রাত দখলের ডাকও। এ বারও বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে রাত দখলের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেই ডাক ছিল মূলত মহিলাদের। ডাক ছিল— ‘মেয়েরা রাত দখল করো।’ ১৪ অগস্ট সেই ডাকে মধ্যরাতে পুরুষ-মহিলা, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে মানুষের স্রোত নেমেছিল পথে।
আগামী বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের দিনই সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি রয়েছে। তার আগে বুধবার গোটা দেশে বাড়িতে বাড়িতে আলো নিভিয়ে প্রদীপ-মোমবাতি জ্বালানোর ডাক দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সে দিনই আরও একবার রাত দখলের ডাক দেওয়া হয়েছে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে।
এই ডাক প্রাথমিক ভাবে দেওয়া হয়েছিল কলকাতার কয়েকটি জায়গায়। ১৪ অগস্টের মতো এই ডাকও ছড়িয়ে পড়ছে শহরতলি হয়ে মফস্সলে। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বার্তায় জুড়ছে নতুন নতুন নাম। সকলেরই আবেদন, সুপ্রিম কোর্ট কোনও সদর্থক নির্দেশ দিক।
আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় টানা ২৩ দিন ধরে আন্দোলন চলছে। কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ-সহ পাঁচ দাবি না মেটা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। যেহেতু বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রয়েছে, তাই বুধবার রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত নাগরিকদের বাডি়র বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়ে প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালানোর আবেদন জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
এই কর্মসূচির নাম— ‘বিচার পেতে, আলোর পথে’। আবেদনে জুনিয়র ডাক্তারেরা লিখেছেন, ‘রাষ্ট্র ও সরকার যেভাবে দোষীদের আড়াল করতে তৎপর হয়েছে, তাতে আমাদের সকলেরই অন্তরে হতাশা নয় ক্ষোভের আগুন সঞ্চারিত হচ্ছে। জাস্টিস ডিলেড-জাস্টিস ডিনায়েড কথাটির সারবত্তা আবারও প্রমাণিত হচ্ছে।’
সেদিনই বিকেল ৫টায় নিউ টাউনের ইকোস্পেস ২ নম্বর গেট থেকে বিশ্ববাংলা গেট পর্যন্ত মিছিল ও গণ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের কর্মী ও সেখানকার নাগরিকেরা। শহরের বেশ কিছু এলাকাতাও বিকেলে মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেদিনই রাতে রাস্তা দখলের ডাক দেওয়া হয়েছে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে।
এবার ডাক— ‘পাঁচ তারিখে সুপ্রিমে ডেট/চারের রাতে বন্ধু সকল/কণ্ঠে তোলো ঝড়ের আওয়াজ/বিচার চেয়ে রাস্তা দখল।’ প্রথম ডাক এসেছিল শ্যামবাজার পাঁচ মাথা মোড় এবং যাদবপুর ৮বি বাস স্ট্যান্ডে জমায়েতের। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বার্তা ছড়িয়ে পড়ার পড়ে নতুন নতুন এলাকায় জমায়েতের ডাক দেওয়া শুরু হয়। সেই তালিকা ক্রমশ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সোমবার রাতে দেখা যায় কলকাতার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে কোচবিহার এবং কান্দি। জঙ্গিপুর থেকে জলপাইগুড়ি।