আরজি করের নির্যাতিতার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, ধর্ষণ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। আমরা চাই ধর্ষণের ক্ষেত্রে দ্রুত পুলিসি অনুসন্ধান করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। তাই নতুন আইন আনা হচ্ছে। আরজি করের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে মমতা বলেন, মেয়েটি মারা গিয়েছে ৯ অগাস্ট। ১২ তারিখ নির্যাতিতার বাড়িতে যাই। তার আগে ঘটনার তদন্তকারী অফিসারকে নথিপত্র নিয়ে নির্যাতিতার বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। যাতে গোটা তদন্তের বিষয়টি পরিবার জানতে পারে। সোমবার আমি গিয়েছিলাম। বলেছিলাম রবিবার পর্যন্ত সময় দিন। তদন্তে কোনও অগ্রগতি না হলে সোমবার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেব। তদন্তের জন্য ১৬৪ জনের সাইবার ক্রাইম টিম তৈরি করা হয়েছিল। পুলিসকে বলেছিলাম ফাস্টট্রাক কোর্টে যেতে। মঙ্গলবার সিবিআই হয়ে যায়। আমরাও এখন বলছি, উই ওয়ান্ট জাস্টিস। প্রথম থেকেই আমরা এই ঘটনায় ফাঁসি চেয়েছি। গভর্নর বিলে সই করে দিলে তা আইনে পরিণত হবে।
রাজ্যের বিভিন্ন কোর্টের কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯১৩ সালে আমাদের ৮৮টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট ছিল। তার টাকা বন্ধ করা হয়েছে। রাজ্যে মহিলাদের জন্য ৫২টি পৃথক কোর্ট রয়েছে। ওইসব কোর্টে ৩ লাখ মামলা দায়ের করা হয়েছে। কামদুনি কেসে ৩ সপ্তাহের মধ্যে চার্জিশিট দেওয়া হয়। আমরা ফাঁসি চেয়েছিলাম।
উল্লেখ্য, এদিন অপরাজিতা বিল পাস হয়ে যায়। এই বিলকে সমর্থন করেন শুভেন্দু অধিকারী।
বিরোধীদের কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা বললেন ট্রেনেও ধর্ষণ হয়েছে। ট্রেন কি রাজ্যপুলিসের! তার দায়িত্ব আরপিএফের। বিরোধীরা যে তথ্য দিচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হোক। কেউ উন্নাওয়ের কথা তো বললেন না! ধর্ষিতা মেয়ের বাবাকে হত্যা করা হয়। চার বছর আগে হাথরসে একটি দলিত মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। সে বিচার পায়নি। বাঁচতেও পারেনি। দেশে প্রতিদিন ৯০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। উত্তরপ্রদেশে ৯ বছরের মেয়ে ধর্ষণ হয়েছে, আগ্রায় ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রী ধর্ষিতা হয়েছে, মহারাষ্ট্রে ধর্ষণ হয়েছে, মুম্বইয়ে-কোলাপুরে ধর্ষণ, অসমে কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। অভিযুক্তকে এনকাউন্টারে মেরে ফেলা হল। ধর্ষণ একটা জাতীয় লজ্জার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় সাজার হার কম। ধর্ষণের ঘটনায় পুলিস ৭৬ শতাংশ ক্ষেত্রে চার্জশিট দিয়েছে। কিন্তু মাত্র ২.৫৬ শতাংশ ক্ষেত্রে অপরাধীর শাস্তি হয়েছে। সমস্যা এই জায়গায়। ন্যায় সংহিতা পাস করার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছিলাম রাজ্যের সঙ্গে কথা বলুন। তাড়াতাড়ি করবেন না। সবার সঙ্গে আলোচনা হোক। সেটা তারা করেনি। বাংলার অসম্মান আপনাদেরও অপমান। আমার বিরুদ্ধে আপনারা যা বলেছেন তা যদি প্রধানমন্ত্রী বিরুদ্ধে বলি!
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যদি কেউ ধর্ষণ করে আর ৭ মাসের মধ্যে জামিন পেয়ে যায় ও তাদের ফুলমালা দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাহলে তাকে তো উত্সাহ দেওয়া হয়। নারী সুরক্ষা আমাদের অধিকার। মহিলাদের সুরক্ষায় ৫৬ টি মহিলা থানা তৈরি করা হয়েছে। সিপিএমের আমলে এসব ছিল ছিল না। ৮৮টি ফাস্ট ট্রাক ও ৬২টি পকসো কোর্ট করেছি। কেন্দ্রই বলছে কলকাতা সবচেয়ে নিরাপদ শহর। উত্তর প্রদেশে ৭ লক্ষ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। বাংলায় ধর্ষণের হার ২.৩ শতাংশ। এটাও হওয়া উচিত নয়। তার পরেও কুত্সা করে যাচ্ছে। এতে আপনারা আরজি করের বিভত্সতা কম করে দিচ্ছেন। আগে নরেন্দ্র মোদীর পদত্যাগ করতে বলুন। আমরা ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ডের সাজা চাইছি এই বিলে। কেউ কেউ বলছে আমরা নাকি আইন করতে পারি না। কিন্তু রাজ্য চাইলে আইন আনতেই পারে। অন্ধ্রপ্রেদেশ, মহারাষ্ট্রও আইন আনছে।
কীভাবে এই আইন কাজ করবে? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই নতুন বিলের তাত্পর্য তিনটি-বর্ধিত শাস্তি, দ্রুত শাস্তি ও ন্যায় বিচার। সকল যৌন হিংসায় শাস্তি হবে কঠোর। ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ক্ষেত্রে ১০-২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আমরা করছি যাবজ্জবীন ও মৃত্যুদণ্ড। নির্যাতিতা কোমায় চলে গেলে প্রাণদণ্ড দেওয়ার কথা বলেছি। অ্যাসিড আক্রমণের ক্ষেত্রে ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় ১০ বছরের কারাদণ্ড রয়েছে। আমরা করেছি আমৃত্যু কারাদণ্ড। প্রধানমন্ত্রী নারীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেননি। তাই তাঁর পদত্যাগের দাবি করছি। নারী শক্তির জয় হোক। অপরাজিতারা বিচার পাক। আরজি করের দোষীদের ফাঁসি হোক এটা আমরা চাই।