হরিয়ানায় গোরক্ষকদের মারে মৃত বাংলার যুবক, পরিবারকে চাকরি মুখ্যমন্ত্রীর
প্রতিদিন | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
কৃষ্ণকুমার দাস: হরিয়ানায় বিজেপির গোরক্ষকদের গণপিটুনিতে মৃত বাংলার শ্রমিক সাবির মোল্লার পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির ধর্মান্ধতার রোষে অসহায় হয়ে যাওয়া সাবিরের পরিবারকে সরকারি চাকরি দিলেন মমতা। অবশ্য ওই চাকরি কে করবেন তা পরিবারের সদস্যরা মিলে আলোচনা করেই ঠিক করবেন বলে এদিনই জানিয়েছেন মৃত সাবিরের বাবা। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের তরফে ওই পরিবারকে ৩ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্যও দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ, গত ২৭ আগস্ট হরিয়ানায় বিজেপির কর্মী একদল গোরক্ষকের অমানুষিক হিংসার বলি হন সাবির মল্লিক। গোমাংস খেয়েছেন এই অপবাদে পিটিয়ে হত্যা করে সাবিরকে। আজ তাঁর বাড়িতে যান তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন। তাঁর সঙ্গে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের প্রতিনিধিদল। শিল্পী সৈকত মিত্র, সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্ত, সমাজকর্মী সুশান রায়, সিদ্ধব্রত দাস এবং বর্ণালী মুখোপাধ্যায়। ছিলেন সুমন ভট্টাচার্য-ও।
সাবির দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে হরিয়ানায় পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন। পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু বিজেপির গোরক্ষক কমিটি এভাবে গোমাংস খাওয়ার অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলবে তা স্বপ্নেও ভাবতেও পারিনি, এদিন দুপুরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার ওই যুবকের বাবা আবদুল কাদের। এই যুবকের পরিবারের পাশে ইতিমধ্যে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল, স্থানীয় পঞ্চায়েত ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বরা সহযোগিতার ও সহানুভূতি হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। পরে আবদুল কাদের জানালেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে আমাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন, যেভাবে প্রথম দিন থেকে আমাদের সহযোগিতা করছেন তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। শুধু তাই নয়, আমার ছেলের দেহ নিয়ে হরিয়ানা থেকে নিয়ে আসা ও অন্ত্যেষ্টি করা এবং আমাদের পরিবারের সুখ-দুঃখের একজন সাথী হয়ে উঠেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই আমরা চিরকৃতজ্ঞ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। চাকরি পাওয়ায় এবার আমাদের পরিবারটা বাঁচবে।”
এর পরই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তিনি আবেদন করেন, যাঁরা আমার ছেলেকে এভাবে খুন করেছে সেইসব দোষীদের কঠোরতম শাস্তি হোক। মৃত যুবকের বাবার বক্তব্য, যেভাবে রাজ্যে সরকার পাশে দাঁড়িয়েছে, এত মানুষ তাদের পরিবারের সঙ্গে আছে দেখে কিছুটা হলেও মানসিক শান্তি পাচ্ছি। তবে একই সঙ্গে সন্তানহারা বাবা প্রশ্ন তুলেছেন, “এ-রাজ্যের মানুষের অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে কেন মৃত্যু হয়? অন্য রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ তো এই পশ্চিমবাংলায় এসে নিশ্চিন্তে চাকরি করছে। তাঁরাও কাজ করছে শান্তির সঙ্গে। তাহলে কেবলমাত্র গোমাংস খাবার অপবাদ দিয়ে কেন আমার ছেলেকে পিটিয়ে মারল হরিয়ানার বিজেপি কর্মীরা? দুঃখের হল সেই রাজ্যের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী উলটে যাঁরা আমার ছেলেকে পিটিয়ে মারল তাঁদের পক্ষেই সওয়াল করছেন।’’