এই সময়: বিরোধিতার তো প্রশ্নই নেই, বিন্দুমাত্র বেফাঁস কথাও নয়। আরজি কর ঘিরে আন্দোলন ও আন্দোলনকারীদের প্রতি সম্পূর্ণ সহানুভূতি রাখারই বার্তা দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। অবশ্য তার পরেও শাসকদলের কেউ কেউ বেসুরো হচ্ছেন। তবে সে সব যে বরদাস্ত করা হবে না, তা বুঝিয়েও দিচ্ছেন নেতৃত্ব। নেতানেত্রীদের আরও নমনীয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।দলের লাইন মেনেই চিকিৎসকদের লালবাজারে ধর্নাকে সমর্থন জানিয়েছেন কুণাল ঘোষ। একই লাইনে গৃহীত হয়েছে দলের বিধায়ক লাভলি মৈত্রের বিরুদ্ধে এফআইআর-ও। ক'দিন আগেই গায়ক অরিজিৎ সিংকে আক্রমণ করা হয়েছিল। সোমবার সমাজমাধ্যমে ফিরহাদ হাকিম পোস্ট করেছেন, 'অরিজিৎ সিং আমাদের গর্ব।'
আরজি করের ঘটনায় এখন রাস্তায় সব রাজনৈতিক দলই। রাস্তায় নামছে শাসকদলও। কিন্তু নেতানেত্রীদের ভাষা যাতে সংযম না ছাড়ায়, সে বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিনেতা-বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক, লাভলিদের মতো কেউ যাতে বেফাঁস মন্তব্য করে দলকে বিপাকে না ফেলেন, তা নিয়ে বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছেন শাসকদলের নেতৃত্ব।
রবিবার অশোকনগরের তৃণমূল নেতা অতীশ সরকার হুমকি দিয়েছিলেন, মহিলাদের ছবি বিকৃত করে তাঁদেরই বাড়ির দরজায় টাঙিয়ে দেবেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি করেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। এক বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয় তাঁকে। এরই মধ্যে 'বদল নয় বদলা'র হুমকি দেন বিধায়ক লাভলি মৈত্র। সিপিএম নেতা সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিরুদ্ধে সোনারপুর থানায় এফআইআর দায়ের করেন।
পুলিশ সেই অভিযোগ নিতে দেরি করেনি। দলের পক্ষ থেকেও তাঁকে সতর্কও করা হয়েছে। দলের এক নেতা বলছেন, 'শুরু থেকেই মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলন নিয়ে সহানুভূতিশীল। আন্দোলনকারীদের আক্রমণ-কটূক্তি করা দলের ঘোষিত নীতিও নয়। কিন্তু লাভলি বা কাঞ্চন আগবাড়িয়ে কু-কথা, আক্রমণ-কটুক্তি করে দলকেই বিপাকে ফেলছেন। সেই জন্যই সোমবার সমাজমাধ্যমে বার্তা নেতা-নেত্রীদের আরও নমনীয়-সহানুভূতিশীল হওয়ার বার্তা দিয়েছেন।'
সোমবার দিনভর সমালোচিত হলেও কাঞ্চনের পাশে দাঁড়াননি দলের কেউই। এমনকী তাঁর মন্তব্যের জেরেই একের পর এক অভিনেতা পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করায় দলকে বিপাকে পড়তে হয়েছে। দলের কাউকে পাশে পাবেন না বুঝেই রাতে নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন কাঞ্চন। তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্ব লাভলিকে সতর্ক করে মুখ খুলতে নিষেধ করেছে।
নির্যাতিতার বিচার চেয়ে দিনকয়েক গান গেয়েছিলেন অরিজিৎ সিং। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কুণাল। এ দিন তেমন কোনও প্রসঙ্গ ছাড়াই সোশ্যাল মিডিয়ায় কলকাতার মেয়র ফিরহাদ লেখেন, 'অরিজিৎ সিং আমাদের গর্ব।' ফলে মনে করা হচ্ছে, দল এই ধরনের বিতর্ক থেকে দূরত্ব তৈরি করতে চাইছে। সেই সূত্র ধরেই সোমবার সকালে লালবাজারের সামনে ধর্নারত চিকিৎসকদের আন্দোলনের পাশে থাকার বার্তা দেন কুণাল।
সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, 'রাত থাকলে ভোরও আসবে। সমর্থন।' মুখ্যমন্ত্রীও দলের নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকদের যেন কোনও ভাবেই আক্রমণ না করা হয়। এমনকী, তীর্যক মন্তব্য করতে নিষেধ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় এমন কোনও আচরণই করা যাবে না বলে নির্দেশ জারি করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব।