• ‘জয়ফুল লার্নিং’ নিয়ে কর্মশালা বীরভূম জেলা প্রাথমিক সংসদের 
    বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: একজন বলল, আমি জিভ। আমার মাধ্যমেই স্বাদ পাওয়া যায়। সঠিক উচ্চারণের জন্য আমি খুবই উপযোগী। আমিই স্বাদ ইন্দ্রিয়। তারপর বলতে উঠল আরও একজন। বলল, আমি কান। আমার মাধ্যমেই বাইরের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। কেউ শব্দ করে ডাকলে তবেই বাকিরা সাড়া দিতে পারে। এরপর একে একে আরও তিনজন বলল। সবশেষে একযোগে তারা বলল, আমরা পঞ্চ ইন্দ্রিয়। সবাই মিলে তৈরি করি মানব শরীর।

    প্রকৃতির থেকে শিক্ষা নিয়ে বাস্তবসম্মত ভাবে কীভাবে পড়াশোনা করা উচিত তাই তুলে ধরছিল মুরারইয়ের প্রাথমিক স্কুলের পাঁচ খুদে পড়ুয়া। বীরভূম জেলা প্রাথমিক সংসদের উদ্যোগে জেলার ৩২টি সার্কেলের বাছাই করা পড়ুয়া ও শিক্ষকদের নিয়ে বিশেষ তিনদিনের পাঠশালার আসর বসেছে সিউড়িতে। সেখানেই মুরারইয়ের মতো মোট ৩২টি সার্কেলের একটি করে টিম তাদের বিষয় তুলে ধরছে। ব্যবহারিক জীবনের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটিয়ে কীভাবে বাস্তবসম্মত পড়াশোনা করতে হবে, পাঠ্যবইয়ের বিষয়কে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখে কীভাবে পড়ুয়ারা খেলার ছলে পড়বে তা নিয়ে এই বিশেষ এই কর্মশালা চলছে। মঙ্গলবার সংসদ অফিসের সেমিনার হলে এই কর্মশালার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। রাজ্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ডেপুটি সেক্রেটারি পার্থ কর্মকার সহ জেলা সংসদের চেয়রাম্যান প্রলয় নায়েক ও আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। 

    মূল লক্ষ্য, শিক্ষার মানের বিকাশ ঘটানোর জন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে শিক্ষকদের ও সেই সঙ্গে আনন্দের মধ্যে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা। সেই কারণে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। গত একমাস ধরে প্রতিটি সার্কেলে এই নিয়ে শিক্ষক ও পড়ুয়াদের মধ্যে চর্চা চলেছে। প্রতিটি সার্কেলের দু’জন করে শিক্ষক ও চারজন পড়ুয়া অংশগ্রহণ করেছে। বিচারক মণ্ডলীর সামনে পিপিটি সহযোগে খুদেরা তাদের ভাবনা তুলে ধরছে। যেমন, বোলপুর চক্রের খুদেরা তুলে ধরছে রবি ঠাকুরের পঠনভাবনা। পল্লিসমাজ জীবন থেকে ভূগোল, ভাষা, শিক্ষাকে কীভাবে আত্মস্থ করা যায় তা তারা তুলে ধরবে। পাইকর সার্কেল তুলে ধরবে ব্যবহারিক জীবনে জ্যামিতির প্রয়োগ। কুঁড়েঘরের একদিক আসলে ত্রিভুজের মতো দেখতে কিনা, চিপসের আকৃতি ত্রিভুজ না বৃত্ত তা নিয়ে বিস্তারিত হাতেকলমে আলোচনা তারা করবে। একইভাবে বাকি সার্কেলের পড়ুয়ারাও প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে নিজে নিজেদের ভাবনা ফুটিয়ে তুলবে। এই ধরনের উদ্যোগ গোটা রাজ্যে প্রথম বলেই দাবি করেন উপস্থিত রাজ্যস্তরের অতিথিরা। সংসদের চেয়ারম্যান প্রলয়বাবু বলেন, কনফুসিয়াস বলতেন আমি যা দেখি তা মনে থাকে। যা শুনি তা কিন্তু ভুলে যাই। সেই ভাবনা থেকেই আমাদের স্কুলগুলিকে নিয়ে এই পরিকল্পনা। করোনার পর আমাদের নানা ভাবে প্রাথমিক স্কুলের পঠন পদ্ধতি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা দরকার হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষক দুইয়ের মেলবন্ধন ঘটানোর জন্য পুঁথির জ্ঞানের বাইরে গিয়ে প্রকৃতি উদ্ভূত শিক্ষার দিকে আমরা হাঁটতে চাইছি। প্রযুক্তির সাহায্যে পড়ুয়ারা তাদের প্রজেক্ট তুলে ধরছে। শেষে বিচারকরা প্রশ্ন রাখছেন। এই নিয়ে একটি বইও আমরা প্রকাশ করছি। ডেপুটি সেক্রেটারি পার্থবাবু বলেন, ‘খুবই সময়োপযোগী ভাবনা বীরভূম জেলার। রাজ্যের বাকি জেলাতেও এই কর্মসূচি নেওয়া উচিত। শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও এই ভাবনার কথা গিয়েছে। আশা করি এইভাবে ‘জয়ফুল লার্নিং’ হলে খুদেদের পড়াশোনার মান কয়েক শ’ গুণ বৃদ্ধি পাবে। • নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)