• সন্দীপের নাম শুনেই মুখ ফেরাচ্ছেন স্বজনরাও 
    বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের থেকে দূরত্ব তৈরি করছেন তাঁর আত্মীয়, বন্ধুরা। সন্দীপের মামাবাড়ি আসানসোলে। আসানসোলের মহীশিলা বটতলার শীতলা কালীমন্দিরের অদূরে দোতলা বিশাল বাড়িটিই আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষর মামাবাড়ি। ছাত্রজীবনে মামাবাড়ির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল সন্দীপের। সপ্তম শ্রেণি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত এখানে থেকেই পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের মতো নামী স্কুলের কৃতি পড়ুয়া ছিলেন সন্দীপ। সেই প্রাক্তনীর কুকীর্তিতে তাজ্জব স্কুলের শিক্ষকরা। তাঁর মামাবাড়ির সদস্যরাও সন্দীপের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করতে চাইছেন। স্কুলের শিক্ষকদেরও দাবি, তাঁর মুখ আলাদা করে মনে করতে পারছেন না। গৃহশিক্ষকের দাবি, লোভই ওকে শেষ করে দিল।

    ১৯৮৭ সালে আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশন থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন সন্দীপ। রামকৃষ্ণ মিশনের কৃতি প্রাক্তনীদের যে গ্রুপ রয়েছে সেখানেও উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্য‌঩ক্ষের। শিল্পাঞ্চলে তাঁর বহু সহপাঠী রয়েছেন, যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল সন্দীপের। তাঁর ব্যাচের অনেকেই চিকিৎসকও হয়েছেন। তাঁদের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল তাঁর। আর জি করের ঘটনার পর সন্দীপের ভূমিকা প্রকাশ্যে আসতেই হতভম্ব সেই বন্ধুরা। খোদ মামাবাড়িই দূরত্ব তৈরি করছে। ছাত্রাবস্থায় সন্দীপের ছায়াসঙ্গী ছিলেন তাঁর অবিবাহিত মামা গৌতম সরকার। স্কুল হোক বা টিউশন, মামার সাইকেলে চড়েই যেতেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর মামার সঙ্গে দেখা করতে গেলে মামি রঞ্জনা সরকার বলেন, তাঁর স্বামী গৌতম সরকার ক্যান্সারে আক্রান্ত, তাঁকে বিরক্ত করা যাবে না। এরপরই তিনি বলেন, ওর মামা যখন ওকে সাইকেল করে নিয়ে যেত তখন আমার বিয়ে হয়নি। আমি কিছু বলতে পারব না। আমাদের সঙ্গে ওঁর কোনও যোগাযোগ নেই। ওঁর কাজ নিয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না। 

    মামি একথা বললেও আসানসোল জেলা হাসপাতাল সূত্রে মিলেছে অন্য তথ্য। স্বাস্থ্যদপ্তরে প্রভাবশালী সন্দীপ মামার ভালো চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে কর্মরত তাঁর সহপাঠীর কাছে দরবার করেছিলেন। সেখানেই চিকিৎসা চলছে মামার। বোঝাই যাচ্ছে, বিপদ দেখে মামি ভাগ্নের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছেন। আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের বর্তমান প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ মহারাজ বলেন, সেই সময়ে আমি স্কুলের দায়িত্বে ছিলাম না। তাই তাঁর সম্পর্কে বলতে পারব না। স্কুলেই ছিলেন সন্দীপের সময়ের শিক্ষক সন্তোষ দাস। তিনি বলেন, আলাদা করে ওঁর মুখ মনে করতে পারছি না। স্কুলের নথি দেখে জেনেছি পড়াশোনায় ভালো ছিল। সেই সময়ে আমাদের স্কুল থেকে বহু ছাত্রই চিকিৎসক হয়েছে। এসবি গরাই রোডে বিদ্যুৎ দাসের কাছে সায়েন্স গ্রুপ পড়তেন সন্দীপ। তিনি বলেন, মামার সাইকেল চড়ে আসত ছেলেটি। পরেও যোগাযোগ ছিল। যা বুঝলাম ওর লোভই ওকে শেষ করল। 

    আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের সন্দীপের সহপাঠীরাও সন্দীপকে নিয়ে প্রশ্ন করতেই মুখ ঘোরাচ্ছেন। অনেকেরই দাবি, যা অভিযোগ শুনছি তা গুরুতর। একজন চিকিৎসক হয়ে লাশ পাচার, অঙ্গ পাচার, ওষুধ নিয়ে যদি কেউ দুনীর্তি করে থাকে তবে তার কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।    
  • Link to this news (বর্তমান)