• ভগ্নপ্রায় স্কুল ভবন সংস্কারের দাবিতে ঘাটালে পথ অবরোধ খুদে পড়ুয়াদের
    বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, ঘাটাল: স্কুলের ভগ্নপ্রায় বাড়ি ভেঙে পড়ছে। যে কোনও সময়ই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অবিলম্বে নতুন স্কুল ভবনের দাবিতে এই চড়া রোদেই পথ অবরোধ শামিল হল খুদে পড়ুয়ারা। মঙ্গলবার বেলা ১০টার পর থেকে স্কুল ড্রেসেই ঘাটাল শহরের প্রসন্নময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় সমস্ত পড়ুয়া শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের আন্ডারপাসের সামনে অবরোধে বসে। তাদের সঙ্গে ছিলেন পড়ুয়াদের বাবা-মায়েরাও। ঘাটাল-মেচোগ্রাম রাস্তাটির দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অবরোধ হওয়ার ফলে বহু মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়। এদিকে রোদে অনেকক্ষণ অবরোধে থাকার ফলে কিছু পড়ুয়া অসুস্থতাও অনুভব করে। শেষে ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ নিয়ে আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। মহকুমা শাসক বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভবনগুলির অবস্থা ভালো নয়। ২০২৫ সালে বিদ্যালয়ের যাতে নতুন ভবন তৈরি হয়, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

    রাজ্যের প্রত্যেকটি শহর ও গঞ্জে যেখানে বেরসরকারি নার্সারি স্কুলগুলির রমরমা অবস্থা এবং উল্টোদিকে সরকার পোষিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি পড়ুয়াদের অভাবে ধুঁকছে। সেই পরিস্থিতিতে ঘাটাল শহরের ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ব্যতিক্রম। বর্তমানে ওই স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা ৩৫০-র বেশি। শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১০ জন।  বিদ্যালয়ে ধারাবাহিক পঠন-পাঠন ভালো হওয়ার কারণে আর্থিক সঙ্গতি সম্পন্ন পরিবারের সদস্যরাও তাঁদের সন্তানদের ওই স্কুলে পড়ান। বাড়ির সামনের সরকার পোষিত প্রাথমিক বিদ্যালয় বা নার্সারি স্কুল ছেড়ে দিয়েও অনেক বাবা-মা তাঁদের ছেলেমেয়েদের ওই স্কুলে ভর্তি করেন। অভিভাবকরা জানালেন, ওই স্কুলের রুমগুলি দেখলে চমকে উঠতে হবে। রুম থেকে চাঙড় খসে খসে ছাত্রছাত্রীদের মাথার উপর পড়ে। কিছুদিন আগে পলেস্তারা পড়ে এক ছাত্রের দাঁত ভেঙে গিয়েছিল।  সুরজ মণ্ডল, সৌদীপ্তা দত্ত, পদ্মা বেরাদের ছেলেমেয়েরা ওই স্কুলে পড়ে। তাঁরা বলেন, ‘বিদ্যালয়ের রুমগুলির যা অবস্থা ছেলেমেয়ের স্কুলে পাঠাতে ইচ্ছে করে না। স্কুলে পাঠিয়ে বাড়িতে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। কারণ যে কোনও সময়েই বড় ধরনের অঘটন ঘটে যেতে পারে।’

    স্কুলের পক্ষ থেকে তো বটেই, অভিভাবকদের পক্ষ থেকেও নতুন স্কুল ভবনের জন্য প্রশাসনের কাছে বার বার আবেদন নিবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। সৌদীপ্তা জানালেন, গত বছর ২৮ আগস্ট একই ইস্যুতে পথ অবরোধ করা হয়েছিল। শিক্ষাদপ্তর এবং প্রশাসন দায়িত্ব নিয়ে জানিয়েছিল, খুব শীঘ্রই নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। সেজন্যই এবার অভিভাবক-অভিভাবিকারা  পড়ুয়াদের সামনে রেখেই অবরোধে শামিল হলেন।

    এদিন তপ্ত পিচের উপরেই পড়ুয়ারা হাতে পোস্টার নিয়ে স্কুল ভবনের দাবি তুলে অবরোধে শামিল হয়। অধিকাংশ পড়ুয়াদের পাশে জলের বোতল, ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের মায়েরা। মায়েরা বলেন, ‘অবরোধ করতে গিয়ে ছেলেমেয়েরা অসুস্থ হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু স্কুলে ক্লাস করতে গিয়ে জখম হওয়ার থেকে অনেক ভালো।’

    স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তৃপ্তি চন্দ বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয় ভবনটি অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় রয়েছে। অবিলম্বে নতুন ভবনের ব্যবস্থা না করলে যে কোনওদিন অঘটন ঘটতে পারে। জেলা শিক্ষাদপ্তর থেকে বিদ্যালয়টি বিপজ্জনক বাড়ি বলে ঘোষণাও করে দিয়েছে। কিন্তু সরকারি অনুদান না পাওয়ায় ভবনের কাজ শুরু করা যায়নি।’

    বিদ্যালয় পরিদর্শক সৌমেন দে-ও এদিনের অবরোধে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরাও চাই বিদ্যালয়ের নতুন ভবন হোক। এনিয়ে আমরা বহু চিঠিচাপাটি করেছি।’ -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)