• তুমুল বিক্ষোভে বার্নপুরে উচ্ছেদ অভিযান থেকে পিছু হটল ইস্কো
    বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: বার্নপুরের নিউটাউনে জবরদখল করে রাখা কোয়ার্টারে উচ্ছেদ অভিযান করতে গিয়ে বাধার মুখে ইস্কো কর্তৃপক্ষ। কোয়ার্টারে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে গেলেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এলাকাবাসীর একাংশ। ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় ইস্কোর টাউনশিপের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে। বাসিন্দাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে নিউটাউন আট নম্বর বস্তিতে থাকা বিশাল খাটাল মানুষের জীবন অতিষ্ট করে দিয়েছে। মোষের গুঁতো খেয়ে  দুর্ঘটনায় কবলে পড়ে একাধিক মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। খাটাল উচ্ছেদ করার জন্য ইস্কোকে চাপ দিতেই তারা দৃষ্টি ঘোরাতে কোয়ার্টারে উচ্ছেদ অভিযানে নামে। বাসিন্দারা স্লোগান তোলেন, ‘খাটাল হাঁটাও, নিউটাউন বাঁচাও’। তাঁদের দাবি, আগে ইস্কো খাটাল উচ্ছেদ করুক। তার পর আমরা‌ই জখরদখলে রাখা ঘর খালি করে দেব।  ইস্কো টাউন সার্ভিসের চিফ জেনারেল ম্যানেজার বিনোদ কুমার বলেন, ‘আমরা এদিন উচ্ছেদ অভিযানে এসেছিলাম। স্থানীয় বাসিন্দাদের খাটাল উচ্ছেদ নিয়ে কিছু দাবি রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হবে।’ 

    ইস্কো টাউনশিপের মধ্যেই রয়েছে বার্নপুর নিউটাউন এলাকা। সেখানকার আট নম্বর বস্তি এলাকায় বিশাল জায়গাজুড়ে রয়েছে খাটাল। খাটালের পাশ দিয়ে যে রাস্তাটি গিয়েছে সেটা ব্যবহার করেন সাত-আটটি এলাকার মানুষ। খাটালের গোবর, মোষদের দাপাদাপিতে নিত্যদিন দুর্ঘটনা হয়। ইস্কোর প্রাক্তন কর্মী সহ একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। বাসিন্দারা খাটাল উচ্ছেদ করতে রবিবারই নাগরিক মঞ্চ গড়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, ইস্কোর কাছে বার বার অভিযোগ করেও কোনও কাজ হচ্ছে না। মঙ্গলবার সেই নিউটাউনেই উচ্ছেদ অভিযানে আসে ইস্কো। খাটালের পাশ দিয়ে আধিকারিকরা এলেও খাটাল উচ্ছেদে ব্যবস্থা না নিয়ে তারা হাজির হয় নিউটাউনের ১১ নম্বর রাস্তায়। সেখানে অবৈধভাবে দখল করে থাকা একটি কোয়ার্টারের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, এই এলাকায় ৩৫টি অবৈধভাবে দখল করে থাকা কোয়ার্টার জবরদখল মুক্ত করা। কিন্তু একটি কোয়ার্টারে হাতে দিতেই এলাকাবাসীর ক্ষোভের মুখে পড়ে ইস্কো কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, আগে খাটাল উচ্ছেদ হবে। তারপরই কোয়ার্টারে উচ্ছেদ করতে হবে।  তাঁরা এও অভিযোগ তোলেন, উত্তরপ্রদেশ, বিহার থেকে এসে খাটালে আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ। পাকাপাকিভাবে বসবাসও করছেন। এঁরা বিজেপির কমিটেড ভোটার। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ইস্কো খাটাল উচ্ছেদ করতে ভয় পাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা আনন্দ উপাধ্যায়, কাউন্সিলার কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ইস্কোকে বার বার বলা সত্ত্বেও খাটাল উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। তাই এলাকাবাসী এদিন বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।’ 

    সূত্রের খবর, ইস্কোর এই তল্লাটেই দেড় হাজারের মতো কোয়ার্টার রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৩০০ কোয়ার্টার দখল করে বাইরের লোক থাকছেন। তাঁরা ইস্কোর তরফে দেওয়া ফ্রি জল, বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। স্থানীয় প্রভাবশালীরাই অর্থের বিনিময়ে লোক বসিয়ে দেন ফাঁকা কোয়ার্টারে। প্রতি মাসে তোলা আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। অভিযান হলে তাঁরাই ঢাল হয়ে দাঁড়ান। অন্যদিকে, ইস্কোর খাটাল নিয়ে নরম মনোভাবও বাসিন্দাদের সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ইস্কোর দাবি, ৩৫ হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। তাই, টাউনশিপ এলাকায় উচ্ছেদ করা হচ্ছে। যাতে সেখানে বহুতল কোয়ার্টার নির্মাণ করা যায়। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, ইস্কোর বিশাল খালি জমি দখল করে খাটাল থাকলেও সেখানে উচ্ছেদ করে কেন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে না?  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)