• বড়দেবীর গুপ্ত পুজোয় রক্ত দেবেন কে? এখনও কাটেনি অনিশ্চয়তা
    বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার: কোচবিহারের বড়দেবীর পুজো ৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো। অন্যান্য দুর্গাপুজোর সঙ্গে এই পুজোর নিয়ম রীতির বিস্তর পার্থক্য। কোচবিহারের মহারাজাদের এই পুজোর নিয়মগুলির মধ্যে অন্যতম মহাষ্টমীর রাতের গুপ্তপুজো। এই পুজোয় নর রক্তের প্রয়োজন হয়। দীর্ঘদিন পুজোয় রক্ত দিয়ে আসছিলেন কোচবিহারের কালজানির বাসিন্দা শিবেন্দ্রনাথ রায়। তিনি দেবত্তোর ট্রাস্ট বোর্ডের অধীনে থাকা বাণেশ্বর মন্দিরে দেউরির কাজ করতেন। চলতি বছর মার্চ মাসে তিনি মারা যান। তারপরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এবার বড়দেবীর পুজোর সময় গুপ্তপুজোয় নররক্ত দেবেন কে? 

    প্রয়াত শিবেন্দ্রনাথ রায়ের ভাই শৈলেন্দ্রনাথ রায় এই গুপ্তপুজোয় রক্ত দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে দেবত্তোর ট্রাস্ট বোর্ডের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু, এখনও তার কোনও উত্তর তিনি পাননি বলেই জানিয়েছেন। দেবত্তোর ট্রাস্ট বোর্ড দাবি করেছে, এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কোনও আবেদনও তারা পাননি। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা বোর্ডের সভাপতির নির্দেশই নেওয়া হবে। প্রয়াত শিবেন্দ্রনাথ রায়ের ভাই শৈলেন্দ্রনাথ বলেন, এত দিন দাদা বড়দেবীর গুপ্তপুজোয় রক্ত দিয়ে এসেছেন। দাদা প্রয়াত। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। এখন আমি বড়দেবীর গুপ্তপুজোয় রক্ত দেওয়ার আবেদন করেছি। তবে কোনও উত্তর পাইনি। 

    কোচবিহারের মহকুমা শাসক তথা দেবত্তোর ট্রাস্ট বোর্ডের সচিব কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রথা রয়েছে। যিনি রক্ত দিতেন তিনি প্রয়াত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দেবত্তোর ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতির কাছ থেকে নির্দেশ নেব। সেই অনুসারেই ব্যবস্থা করা হবে। 

    কোচবিহারের মহারাজাদের শুরু করা বড়দেবীর প্রতিমা অন্যান্য দুর্গা প্রতিমার থেকে অনেকটাই আলাদা। পুজোর রীতিনীতিতেও অনেক পার্থক্য রয়েছে। ময়নাকাঠের উপর প্রতিমা তৈরি, মোষ বলি, গুপ্তপুজো থেকে শুরু করে অনেক নিয়মই এখানে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তাই এই পুজোর সঙ্গে কোচবিহারবাসীর ভাবাবেগ জড়িত। জানা গিয়েছে, গুপ্তপুজোর সময় গভীর রাতে হাতের আঙুল থেকে রক্ত দিতেন শিবেন্দ্রনাথ রায়। পুজোর সময় বাইরের কোনও ব্যক্তি থাকেন না। শিবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যুর পর এবার কে গুপ্ত পুজোয় রক্ত দেবেন, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এই অনিশ্চয়তা কবে কাটবে, তাও স্পষ্ট নয়।   নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)