• দু’মাস ঘোরার পর কিডনির অস্ত্রোপচার
    বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: দীর্ঘ দু’মাস ঘোরার পর অবশেষে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্বামীর অস্ত্রোপচার করাতে পেরে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন যশোদা বর্মন। কোচবিহার জেলার জামালদহের বাসিন্দা যশোদাদেবীর স্বামীর কিডনিতে পাথর হয়েছিল। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্বামীর অস্ত্রোপচার করানোর জন্য ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়েছেন। অবশেষে মঙ্গলবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর স্বামীর কিডনির পাথর অস্ত্রোপচার করে বের করা হল। 

    অপারেশন থিয়েটারের বাইরে দাঁড়িয়ে যশোদা বর্মন বলেন, জামালদহ থেকে এখানে আসা-যাওয়া করাটা অনেক কষ্টকর। দু’মাস আগে এখানে স্বামীকে ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। সেইসময় কিডনিতে পাথর ধরা পড়ে। সব পরীক্ষার পর ডাক্তাররা অপারেশনের দিন দিয়েছিলেন। সেইমতো এক মাস বাদে এসেছিলাম। কিন্তু, সেদিন আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন চলছে। তার পরের সপ্তাহে আসতে বলা হয়। সেইমতো এসেও ঘুরে যেতে হয়েছিল। শেষপর্যন্ত স্বামীর অস্ত্রোপচার হওয়ায় হাঁফছেড়ে বাঁচলাম। মেডিক্যাল থেকে বারবার ঘুরিয়ে দেওয়ায় একসময় যশোদাদেবী স্বামী ধীরেন বর্মনের অস্ত্রোপচারের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরা গরিব। আমাদের পক্ষে নার্সিংহোমে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। চোখের সামনে কিডনিতে পাথরের ব্যথায় স্বামী কষ্ট পেয়েছে। তাই কষ্ট হলেও ডাক্তারবাবুদের দেওয়া দিনে এসেছি। বারবার ঘুরে গিয়ে একসময় হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। স্বামীর  অস্ত্রোপচার করানোর আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। চোখের সামনে আমার মতো অনেককেই ঘুরে যেতে দেখেছি। 

    হাসপাতাল সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক বলেন, পিজিটিরা কর্মবিরতিতে থাকায় আমাদের পূর্ব নির্ধারিত অস্ত্রোপচার সংখ্যা কমে গিয়েছে। পিজিটিরা অস্ত্রোপচারে সিনিয়র সার্জেনদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা কর্মবিরতি করায় একসঙ্গে অনেকগুলি অস্ত্রোপচার এখন করা সম্ভব হচ্ছে না। সেই কারণেই অনেক রোগীকে পূর্ব নির্ধারিত দিন দেওয়া সত্ত্বেও আমরা সময়মতো তাঁদের অস্ত্রোপচার করতে পারছি না। ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে অস্ত্রোপচারের দিন পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। এতে আমাদের ব্যর্থতারও দিক নেই। সেই কারণেই জামালদহের ওই ব্যক্তির দু’মাস পর এদিন অস্ত্রোপচার হল। 

    আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে পিজিটি ও জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন ২৫ দিনে পড়েছে। এদিনও দেখা গিয়েছে রোগীদের হয়রানির চিত্র। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর রোগীদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। সোমবারের মতো মঙ্গলবারও আউটডোরে চার হাজারের বেশি রোগী হয়। কিন্তু, ডাক্তারের সংখ্যা কম হওয়ায় লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে নাজেহাল হন রোগী ও তাঁদের বাড়ির লোকেরা। জরুরি বিভাগেও এদিন অনেক রোগীকে ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। 

    এদিকে, এদিন আন্দোলনরত ডাক্তাররা জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেননি। তাঁরা আন্দোলনের ধারায় নতুনত্ব আনতে এদিন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে খুন হওয়া তরুণী ডাক্তারের স্মৃতিতে এবং ঘটনায় যুক্তদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এই উদ্যোগ বলে জানান জুনিয়র ডাক্তার সহেল মুখোপাধ্যায়। এদিন রক্তদান শিবিরের সূচনায় উপস্থিত ছিলেন কলেজের প্রিন্সিপাল ডাঃ ইন্দ্রজিৎ সাহা, ডিন ডাঃ সন্দীপ সেনগুপ্ত সহ অন্য বিভাগের প্রধানরা। ডাঃ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এই কর্মসূচিতে একদিকে একটা ঘৃণ্য ঘটনার প্রতিবাদ, অন্যদিকে অসহায় মানুষের চিকিৎসায় রক্তের নিশ্চয়তা দিয়ে সহকর্মীর স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা। 
  • Link to this news (বর্তমান)