• আন্দোলন চলছে, ভুগছে মানুষ, সন্দীপ গ্রেপ্তারের পরও দুর্ভোগ, স্কুল থেকে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরল শিশুরা
    বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বেথুন কলেজিয়েট স্কুল থেকে সল্টলেক করুণাময়ী। ছুটি হয়েছে ৩টে ৫০ মিনিটে। আর ক্লাস সেভেনের সুমনা বাড়ি ফিরেছে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। কেন? আন্দোলন চলছে শহরে। তাই মঙ্গলবারও এই তিলোত্তমা অচল। স্তব্ধ। বিচার কি সুমনার বাবা-মা চাইছেন না? জাস্টিসের জন্য সরব তাঁরাও। কিন্তু মেয়ের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেনশনের বিনিময়ে নয়। বিক্ষোভ-আন্দোলনে প্রথমে ঘণ্টাখানেক থমকে থাকা মধ্য ও উত্তর কলকাতা, আর তারপর তীব্র যানজট। সুমনার মতো শিশুরা এদিন যখন বাড়ি পৌঁছেছে, চোখেমুখে আতঙ্ক। খালি পেট। কারণ, আন্দোলন চলছে। আর জি করে মর্মান্তিক ধর্ষণ-খুনের বিচার চেয়ে যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল, আজ তা রাজনীতির চাদর মুড়ে পথেঘাটে ছড়িয়ে পড়েছে। ভুগছে আম জনতা। সেই সাধারণ মানুষই হয়তো ১৪ আগস্ট রাত দখলে নেমেছিল রাস্তায়। আন্দোলনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এখনও চাইছে, ন্যায়বিচার পাক অভয়া। কিন্তু শ্যামবাজারের মতো কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকবে? সন্দীপ ঘোষ গ্রেপ্তার হওয়ার পরও? এই প্রশ্ন কলকাতারই বহু বাসিন্দার।

    সোমবার দুপুর তিনটেয় শুরু হওয়া লালবাজার অভিযান শেষ হয়েছে এদিন। ২২ ঘণ্টা বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে অবস্থানের পর তাঁদের প্রতিনিধিদলকে লালবাজারে পুলিস কমিশনার বিনীত গোয়েলের সঙ্গে দেখা করে ডেপুটেশন জমা দেওয়ার অনুমতি দেয় পুলিস। সিপির পদত্যাগ চেয়ে সিপির কাছেই সেই ডেপুটেশন দিয়ে আসে ২২ জনের প্রতিনিধিদল। সোমবারই পুলিস তাদের বলেছিল, আপনাদের মধ্যে থেকে প্রতিনিধিরা লালবাজারে গিয়ে ডেপুটেশন জমা দিতে পারেন। কিন্তু ব্যারিকেড খোলার দাবিতে অনড় ছিলেন তাঁরা। শেষে পিছু হটে পুলিস। লালবাজারের সামনে বেনজির ভিড়। সেখান থেকে কোনওমতে বেরতে চাইছেলেন শুভ্রনীল ভট্টাচার্য। বললেন, ‘এই সমাধান সূত্র সোমবার রাতেই পাওয়া যেত। ইগোর লড়াইয়ে আন্দোলনকারীদের হয়তো নৈতিক জয় হল। ভুগতে হল আমাদের। অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে ৩ কিমি হাঁটতে হয়েছে। রাস্তাই যে বন্ধ!’ খানিক দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধ হঠাৎ প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি কোন মিডিয়া?’ শুনেটুনে তাঁর পরের প্রশ্ন, ‘ডাক্তারদের পাঁচ দফা দাবির দ্বিতীয়টাই তো ছিল সন্দীপের গ্রেপ্তারি। তারপরও অবস্থান-বিক্ষোভ থেকে এঁরা নড়ছেন না কেন বলতে পারেন?’ ততক্ষণে স্লোগান উঠছে লালবাজার চত্বরে, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আয় পুলিস দেখে যা, ডাক্তারদের ক্ষমতা’। আশপাশের বাড়ি থেকে সেই দৃশ্য মোবাইলবন্দি করার হিড়িক চরমে। বিরক্তি এবং হতাশা শুধু বাড়ির বাইরে থাকা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের। লালবাজার স্ট্রিট, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, রাধাবাজার লেন সহ মধ্য কলকাতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা একেবারে স্তব্ধ। কারণ, আন্দোলন চলছে।

    আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের মুখপাত্র অনিকেত মাহাত বলেন, ‘বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট থেকে অবস্থান-বিক্ষোভ তুলে নিচ্ছি। তবে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আন্দোলন চলবে। আমরা সিপিকে বলেছি, ১৪ আগস্টের রাতে আর জি করে বহিরাগতরা তাণ্ডব চালায়। সেই দায় আপনাকে নিতে হবে।’ আন্দোলনকারীদের দাবি, সেই ঘটনায় পুলিসের ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন সিপি। তিনি আন্দোলনকারীদের বলেছেন, এই ব্যর্থতার জন্য যদি তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তিনি তা হাসিমুখে মেনে নেবেন।

    ভিড় ধীরে ধীরে পাতলা হচ্ছে লালবাজার চত্বরে। ডালহৌসি চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের জানালা থেকে মুখ বাড়িয়ে এক নিত্যযাত্রী প্রশ্ন করলেন, ‘দাদা, এবার কি অফিস টাইমে মিছিল-বিক্ষোভ বন্ধ হবে?’
  • Link to this news (বর্তমান)