• আর জি করের জৈব ও মেডিক্যাল বর্জ্য পাচারে কি বাংলাদেশি যোগ? তথ্য পেলেন গোয়েন্দারা
    বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি করের আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে এবার বাংলাদেশ যোগ? দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে এমনই তথ্য  সিবিআই পেয়েছে বলে খবর। গোটা প্রক্রিয়ায় ‘রবি’ নামে এক বাংলাদেশি নাগরিকের যোগ মিলেছে বলে জানা যাচ্ছে। প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে যোগসাজশ করে হাসপাতালের জৈব ও মেডিকেল বর্জ্য সীমান্তের ওপারে পাচার করতেন বলে জেনেছে এজেন্সি। এর বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ টাকা সন্দীপবাবু রোজগার করেছেন বলে দাবি তাদের। অনুমতি ছাড়াই কীভাবে এগুলি পাচার হলো, তা অভিযুক্তকে জেরা করে প্রকাশ্যে আনতে চাইছেন তদন্তকারীরা। তবে দুর্নীতির গভীরতা যে অনেকবেশি মঙ্গলবার আলিপুরে সিবিআই আদালতে এমনটাই দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। 

    সিবিআই জেনেছে, ২০২২র ফেব্রুয়ারি থেকে-২০২৩ পর্যন্ত  আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল বর্জ্য তৈরি হয়েছে ৪৯৬০২.৪৪ কেজি। অথচ এই হাসপাতালের সঙ্গে তুলনীয় এনআরএসে’র বর্জ্যর পরিমাণ ১৫৩৬৫০ কেজি। ২০২০’ র মার্চে সন্দীপবাবু একটি অর্ডার জারি করে বলেন, এখান থেকে যে  বর্জ্য আলাদা করা হয়েছে, সরকার নির্ধারিত মানের চাইতে অত্যন্ত খারাপ ছিল। এই নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত হয়। সেই রিপোর্ট হাতে এসেছে এজেন্সির। তাতে উল্লেখ রয়েছে, হাসাপাতালে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, স্যালাইনের বোতল, হ্যান্ড গ্লাভস এগুলি বেআইনিভাবে বিক্রি করা হয়েছে। এরপিছনে একটি চক্র কাজ করছে। যার মাথায় রয়েছে প্রাক্তন অধ্যক্ষের স্নেহধন্য সিকিওরিটি গার্ড আফসার খান। তাঁর নির্দেশমতো শঙ্কর রাউথ নামে এক ব্যক্তি বাংলাদেশি নাগরিক রবিকে তা বিক্রি করছেন। এরপরই শঙ্করকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই জানতে পারে, আফসারের কথামতো এই বর্জ্য চলে গিয়েছে সীমান্তের ওপারে। কিছু বর্জ্য (ব্যবহৃত সিরিঞ্জ) আবার ‘রিসাইকেল’ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে চলে গিয়েছে। কোনওরকম টেন্ডার বা সার্কুলার ছাড়াই এগুলি বিক্রি করে দেওয়ার কাজ চলেছে দিনের পর দিন।  এজেন্সির দাবি, প্রাক্তন অধ্যক্ষের মদতে এই কাজ চালিয়ে গিয়েছেন আফসার। এখান থেকে যে টাকা এসেছে, আফসার মারফত তা গিয়েছে সন্দীপবাবুর কাছে। জেরার শুরুতে এই প্রশ্নের উত্তর এড়ালেও, হেফাজত পর্বে নথি সামনে রেখে তাঁকে প্যাচে ফেলতে চান তদন্তকারীরা। 

    মঙ্গলবার দুর্নীতি মামলায় সন্দীপ ঘোষ, আফসার খান সহ চারজনকে আলিপুরে বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজির করে ১০ দিনের হেফাজত চায়। এজেন্সির আইনজীবী রামবাবু কানোজিয়া আদালতে বলেন, এই মামলাটির যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। একটা বড় যোগসাজশ কাজ করছে। সেই কারণে চারজনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে হবে। হাসপাতালে কফিশপ তৈরি, হাসপাতালের বিভিন্ন জিনিস কেনা সহ একাধিক জায়গায় দুর্নীতি হয়েছে। নির্দিষ্ট সংস্থাকে টেন্ডার পাইয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ। সাতটি ভুয়ো ফার্ম তৈরি করা হয়েছিল। তাদের বরাত দেওয়া হয়েছিল। টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আফসারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্বাস্থ্যদপ্তর থেকে নিযুক্ত আফসার, এর বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁদের জেরা করে নতুন কোনও অপরাধের তথ্য মিলতে পারে। শুধু এই চারজনই নন. অভিযুক্তের সংখ্যা আরও বেশি। তাঁদের নাম ধৃতদের জেরা করে জানতে হবে। আফসারের আইনজীবী জামিন চান। সন্দীপের আইনজীবী জাহিব রউফ বলেন, তিনি মক্কেলের জামিন চাইছেন না। তবে সন্দীপবাবুর অ্যালার্জিতে ভোগেন। তাই তাঁকে কম সময়ের জন্য হেফাজতে পাঠানো হোক।   
  • Link to this news (বর্তমান)