‘মুখ খুলব? যদি ভর্তি না নেয়!’ ইমার্জেন্সির বাইরে সিঁটিয়ে রোগীরা
বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এসএসকেএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ঠিক বাইরে অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধ। বাবাকে এক হাতে ধরে পাশেই বসে উদ্বিগ্ন ছেলে। আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে পরিজনরা। কী হয়েছে? পরিষেবা পাচ্ছেন হাসপাতালে? উত্তর এল, ‘হ্যাঁ! বলেছে বাইরে একটু অপেক্ষা করতে। ভর্তি নিয়ে নেবে।’ কোথা থেকে এসেছেন? কী সমস্যা? ‘হাওড়ার শ্যামপুর।’ এক পরিজন উত্তর দিচ্ছিলেন। হঠাত্ই ছেলে বলে উঠলেন, ‘আপনি এসব লিখলে যদি বাবাকে আর ভর্তি না নেয়?’ পরিষেবা পাওয়া না পাওয়া নিয়ে মুখ খুললে ভর্তি নেবে না কেন? ‘বলব? যদি ভর্তি না নেয়?’ মঙ্গলবার এসএসকেএমের ইমার্জেন্সির বাইরে রোগীর পরিজনরা এমনই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকলেন। কেন? উত্তর নেই।
শিশুসন্তানকে নিয়ে এলেন এক ভদ্রমহিলা। কাঁদো কাঁদো মুখে ইমার্জেন্সি থেকে বেরলেন। ভর্তি করাতে হবে? জিজ্ঞেস করতেই মহিলার উত্তর, ‘হ্যাঁ নেবে বলেছে। আর কিছু বলতে পারব না।’ আর এক মহিলা তাঁর বাড়ির লোককে ইমার্জেন্সি থেকে বের করে হাসপাতালের ভিতরের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ভর্তি নিচ্ছে? ‘পরে বলব’, ছুটলেন এটুকু বলেই। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রোগীর পরিজনরা কথা না বলতে চাইলেও, ওপিডির দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে এদিন ক্ষোভ উগরে দিলেন অনেকেই। কারণ, চিকিত্সক নেই। মঙ্গলবার ভোরে কলকাতার রাজপথে দাঁড়িয়ে আন্দোলনরত পড়ুয়ারা যখন স্লোগানে স্লোগানে আকাশ কাঁপাচ্ছিলেন, ঠিক তখন... ভোর পাঁচটায় নদীয়া থেকে ডাক্তার দেখাতে এসএসকেএমের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তাপস শিকদার। বলছিলেন, ‘দুটো ট্রেন বদলে, তারপর একটা বাসে চেপে ১০টা নাগাদ হাসপাতালে এলাম। এখন দেড়টা বাজে। ডাক্তার দেখাতে পারলাম না।’ তাপসবাবু প্যান্ডেল বাঁধেন। মাসে একদিন আসতেই হয়।
নলহাটি থেকে এসেছিলেন করিম শেখ। হার্টের সমস্যা ধরা পড়ার পর থেকে চাষাবাদের কাজ ছাড়তে হয়েছে। মাঝে মধ্যেই ক্লান্ত হয়ে রাস্তায় বসে পড়ছিলেন। ভাঙড়ের শাহজাহান চৌধুরীর ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিল ২০০৮ সালে। প্রবল রোদে ৩-৪ ঘণ্টা লাইনেই দাঁড়াতে হল। ওঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘কেউ কি চাকরি করে আন্দোলন করছেন না? একমাত্র ডাক্তাররাই সব বন্ধ করে আন্দোলনে নেমেছেন! এটা সরকারি হাসপাতাল। আমাদের পরিষেবা দিতেই হবে।’
এসএসকেএমের কার্ডিওলজিতে এদিন দু’জন ডাক্তার ছিলেন বলে খবর। কিন্তু রোগীর চাপ ছিল প্রবল। রাতের রাস্তার দখল যদি আন্দোলনকারীরা নিয়ে থাকেন, সকালের হাসপাতালের দখল কিন্তু রোগীরা নিচ্ছেন। পরিসংখ্যানও সেকথাই বলছে। এদিন আর জি কর হাসপাতালে ওপিডিতে প্রায় আড়াই হাজার রোগী এসেছিলেন। জরুরি বিভাগে দুপুর ২টো পর্যন্ত এসেছিলেন ৬৪ জন, আর ভর্তি হয়েছেন ৬২ জন। তাও মন খুলে কথা বলতে আড়ষ্ট তাঁরা। রোগী এবং পরিজন। উত্তর কি আন্দোলনের মঞ্চেই লুকিয়ে?