• লাগাতার বিক্ষোভ-মিছিলে নাজেহাল শহররাসী, ১৫ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগছে দেড় ঘণ্টা!
    বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘আমহার্স্ট মোড় থেকে পার্কস্ট্রিট। গাড়িতে যেতে সময় লাগে কমবেশি ১৫ মিনিট। মঙ্গলবার সেই পথ পেরতে সময় লাগল প্রায় দেড় ঘণ্টা! ভ্রু কুঁচকে গজগজ করছিলেন ঘর্মাক্ত এক বাইক চালক, বলছিলেন ‘আন্দোলন চলুক, রাস্তা বন্ধ থাকবে কেন?’  শিশুকন্যাকে স্কুল থেকে আনতে মধ্য কলকাতা থেকে পার্কস্ট্রিটে এসেছিলেন তিনি।  

    সোমবারের পর মঙ্গলবারও দিনভর বন্ধ সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ-বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট ক্রসিং। তার জেরে রাস্তার উপর থমকে যায় গাড়ির গতি। চরম দুর্ভোগে পড়ে শিয়ালদহ থেকে ডালহৌসি, হাওড়াগামী গাড়ি। চালকদের কথায়, বেলা ১২টার পর দুর্ভোগ বেড়েছে। আমহার্স্ট স্টিট মোড় থেকে রাজা রামমোহন সরণি হয়ে ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া মোড় পর্যন্ত যানজট ছিল। কিন্তু, সেখান থেকে ডানদিকে ঘুরে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে ঢুকতেই গাড়ির লম্বা লাইন। ২০০ মিটার রাস্তা পেরিয়ে বউবাজার মোড় যেতে প্রায় ৩০ মিনিট পেরিয়ে যায়। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে ঢোকার মুখে দফায় দফায় যানজটের শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। কারণ, সেখানে লালবাজারগামী বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের মুখে ব্যারিকেড করা ছিল। যে গাড়িগুলি সোজা যেত, সেগুলি বাঁদিকে অথবা ডানদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে গাড়ির গতি আরও কমে যায়। বাঁদিকে ঘুরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ছিল যানজট। 

    কলকাতা পুলিসের ট্রাফিক বিভাগের তথ্য বলছে, স্বাভাবিক কর্মব্যস্ত দিনে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় হাজারখানেক যানবাহন চলাচল করে। এই রাস্তা দিয়েই শিয়ালদহ ও উত্তর কলকাতা থেকে আসা বহু বাস, গাড়ি, ট্যাক্সি হাওড়া স্টেশনের দিকে যায়। বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, বউবাজার থেকে ডালহৌসি যাওয়ার একমাত্র পথ এই রাস্তা। সপ্তাহের প্রথম দু’টি কাজের দিনে জুনিয়র চিকিৎসকদের লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভে বন্ধ শহরের অতি গুরুত্বপূর্ণ পথ। তার রেশ পড়ল মধ্য কলকাতার সমস্ত ছোট-বড় রাস্তায়। উত্তর কলকাতাতেও আংশিক প্রভাব পড়েছে। 

    বিকেলে ছিল বামেদের মিছিল। তার জেরে ঘণ্টাখানেক অবরুদ্ধ থাকল শ্যামবাজার পাঁচমাথা। প্রথমে ডিএসওর জমায়েতে শ্যামবাজারের একাংশ স্তব্ধ হয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ বাদে বামফ্রন্টের মহামিছিল রাজাবাজার থেকে শ্যামবাজারে এসে পৌঁছয়। প্রথমে খান্নার সামনে পুলিসের ব্যারিকেড ভেঙে দেন বাম কর্মী-সমর্থকরা। এরপর শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে এসে রাস্তায় বসে পড়েন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা। বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম সহ শরিকদলের নেতৃত্বরা পাঁচ মাথার মোড়েই ভাষণ দেন। ন্যায় বিচার, পুলিস কমিশনারের অপসারণের দাবিতে নেতৃত্ব সুর চড়াতে থাকেন। গোটা শ্যামবাজার মোড়ে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। যার ফলে উত্তর কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক যানজট হয়। শিয়ালদহগামী বাস আর জি কর সংলগ্ন ব্রিজ থেকে নামতেই বাঁদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। শ্যামবাজার থেকে অসংখ্য মানুষ বাস ধরার জন্য হাঁটতে শুরু করেন। অসন্তোষ প্রকাশ করেন পথচলতি মানুষ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। হাতিবাগানের ব্যবসায়ী অমর দাসের কথায়, মাসখানেক পরেই পুজো। কিন্তু, অন্যান্য বছর বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়। এবছর আন্দোলন, মিছিলের জেরে বিক্রিবাটা লাটে উঠেছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)