• নিজের বাগানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত বাবা-মা-ছেলে 
    বর্তমান | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: বাগান থেকে পেয়ারা চুরি আটকাতে গাছের ফাঁক দিয়ে বিদ্যুতের খোলা তার জড়িয়ে রাখা হয়েছিল। সেই ‘নিরাপত্তা বলয়ের’ ছোঁয়া লেগে মৃত্যু হল একই পরিবারের তিনজনের। মৃতেরা হলেন প্রৌঢ় দম্পতি ও তাঁদের ছেলে। মঙ্গলবার তিনজনের দেহই উদ্ধার হয়েছে বাগান থেকে। মৃতদের নাম জগদীশ বিশ্বাস (৬০) শান্তি বিশ্বাস (৫৪) ও মানবেশ বিশ্বাস (২৫)। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে মগরাহাট থানার মৌখালিতে। ঘটনাচক্রে ওই পরিবারই বাগানটির মালিক। ডায়মন্ডহারবার পুলিস জেলার অতিরিক্ত সুপার মিতুনকুমার দে বলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্তের পরই জানা যাবে।  

    স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার থেকেই বাবা-মা ও ছেলের কোনও হদিশ পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিন সকালে প্রতিবেশীরা আচমকাই ওই পেয়ারা বাগানে তিনটি দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। বৃষ্টিতে সেখানে গোড়ালি সমান জল জমে ছিল। বাগানে দু’জনের দেহ উপুড় হয়ে পড়েছিল এবং একটি দেহ চিৎ করা অবস্থায় পাওয়া যায়। কাছে গিয়ে দেখতেই পাড়া-প্রতিবেশীরা চমকে ওঠেন। দেখা যায়, তিনজনই বিশ্বাস পরিবারের সদস্য। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে মগরাহাট থানার পুলিস। প্রথমে মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হলেও পরে স্থানীয়রা বিদ্যুৎবাহী তারের হদিশ পান। সুপারি গাছের ফাঁক দিয়ে সেটি জড়ানো রয়েছে। তারের উৎস খুঁজতে গিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, গোটা বাগানের এক পাশে ওই তার জড়িয়ে এক প্রকার ‘নিরাপত্তা বলয়’ করে রাখা হয়েছিল এবং তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া ছিল। মৃতদের বাড়ি থেকেই সংযোগ দেওয়া হয়েছিল তারে। কিন্তু বাগানের কাজ করতে গিয়ে কোনওভাবে সেই তারের স্পর্শে আসতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনজন। যেভাবে দেহগুলি পড়েছিল, তাতে পুলিস মনে করছে, বাবা ও ছেলে প্রথমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাঁদের বাঁচাতে গেলে মা’ও রেহাই পাননি। দেহের পাশে পড়েছিল বাজার করার ছোট একটি ব্যাগ। মনে করা হচ্ছে, পেয়ারা পাড়তে গিয়েই এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিসের দাবি, সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। 

    জগদীশবাবুর বাড়ির একেবারে পাশেই এই পেয়ারা বাগান। একদিক পুরোটাই খোলা। ফাঁকা জায়গা হওয়ায়, সেখান থেকে অবাধে বাগানে ঢুকে পড়তে পারেন যে কেউ। তদন্তে প্রাথমিকভাবে পুলিস জানতে পেরেছে, মাঠে খুঁটি বসিয়ে তার লাগানো হয়েছিল। তারপর তা টেনে বাড়ির কাছ পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়। তারটি এতটাই সূক্ষ যে, খালি চোখে বোঝা যাবে না। আর তারই মাশুল প্রাণ দিয়ে দিতে হল বাড়ির তিন সদস্যকে।
  • Link to this news (বর্তমান)