• হাউস স্টাফ নিয়োগেও কি দুর্নীতি
    আনন্দবাজার | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • গত এপ্রিলে ‘হাউস স্টাফ’ নিয়োগের ক্ষেত্রে ১৫% নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা চালু করেছিল স্বাস্থ্য ভবন। আর জি কর-কাণ্ডের পরে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ তুলেছিলেন, মৌখিক পরীক্ষার সুযোগ নিয়ে ‘হাউস স্টাফ’ নিয়োগেও ব্যাপক দুর্নীতি করেছে প্রভাবশালী ‘বর্ধমান শাখা’।

    সেই কারণে বারবার মৌখিক পরীক্ষা প্রত্যাহার করে আগের মতো লিখিত পরীক্ষা চালুর দাবি জানিয়েছিলেন বর্ধমান মেডিক্যালের চিকিৎসক পড়ুয়ারা। লিখিত ভাবে কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমী বন্দোপাধ্যায়ের কাছে এই দাবি জানান তাঁরা। সোমবার রাতে অধ্যক্ষ স্বাস্থ্যভবনে ই-মেল করে বিষয়টি জানানো হয়। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবন স্থানীয় ভাবে হাউস স্টাফ নিয়োগ বাতিল ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্তে আন্দোলনকারীরা খুশি। তবে চিন্তায় পড়েছেন সদ্য হাউসস্টাফ হওয়া অনেকেই।

    বর্ধমান মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে নতুন পদ্ধতিতে ‘হাউস স্টাফ’ নিয়োগের নির্দেশিকা জারি হয়েছিল। আগে সম্পূর্ণ লিখিত পরীক্ষা হত। তার ভিত্তিতে হাউস স্টাফ হওয়ার সুযোগ মিলত। নতুন পদ্ধতিতে ৮৫ শতাংশ লিখিত ও ১৫ শতাংশ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়।

    আন্দোলনকারীদের দাবি, ওই পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে বারবার আন্দোলন হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও ‘বর্ধমান শাখার’ ঘনিষ্ঠেরা প্রতিবাদ আটকাতে শাসানি দেওয়া শুরু করেছিল। এমনকি, কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনার সময়ে মোবাইল ফোন ‘বর্ধমান শাখার’ ঘনিষ্ঠদের কাছে জমা রাখতে হয়েছিল।

    আন্দোলনকারীদের একাংশের দাবি, “যাঁরা ওই নিয়মের প্রতিবাদ করেছিলেন, তাঁদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। মৌখিক পরীক্ষায় তাঁদের নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্ধমান শাখার ঘনিষ্ঠদের বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছিল। লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর পেলেও মৌখিকে বেশি নম্বর পাওয়ার দৌলতে বর্ধমান শাখার ঘনিষ্ঠেরা হাউস স্টাফ হওয়ার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন।”

    স্বাস্থ্যভবনের দাবি, বর্ধমান মেডিক্যাল থেকে প্রথম অভিযোগ আসে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এসএসকেএম, এনআরএস-সহ গোটা রাজ্যেই এমবিবিএস পড়ুয়াদের বড় অংশের মধ্যেই মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। প্রতিটি কলেজেই হাউস স্টাফ নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন। সে কারণেই স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক এপ্রিলের হাউস স্টাফ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বাতিল করেছেন।

    স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, সম্ভবত পুরনো পদ্ধতিতেই ফিরতে চলেছে স্বাস্থ্যভবন। বর্ধমান মেডিক্যালে হাউস স্টাফের জন্য ৭২টি আসন রয়েছে। হাউস স্টাফ হওয়ার জন্য ১৪০০ নম্বরের পরীক্ষা দিয়েছিলেন ১৫২ জন। তাঁদেরই এক জন বলেন, “১৪০০ নম্বরের পরীক্ষায় ১৫% মৌখিক। সাধারণ পড়ুয়াকে ৫% দিয়ে বর্ধমান শাখার ঘনিষ্ঠ কাউকে ১৩% নম্বর দেওয়ার নজির রয়েছে। সেই কারণে পরীক্ষায় বিশাল নম্বরের ফারাক হয়ে গিয়েছে। অনেক যোগ্যই বাতিলের তালিকায় চলে যান। বর্ধমান শাখার অন্তত ছ’জন ঘনিষ্ঠ এই সুবিধা পেয়ে হাউস স্টাফ হয়েছেন।”

    অন্য দিকে, বিজ্ঞপ্তি বাতিল হওয়ায় বর্ধমান মেডিক্যালের একাধিক হাউস স্টাফের মনে ধন্দ তৈরি হয়েছে। তাঁদের নিয়োগও কি বাতিল হয়ে গেল, প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে তাঁদের মনে। এক হাউস স্টাফ বলেন, “সবাই তো আর দুর্নীতি করে হাউস স্টাফ হননি। ছ’মাস হাউস স্টাফ হিসেবে কাজ না করলে শংসাপত্রও মিলবে না। কী হতে চলেছে, বুঝতে পারছি না।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)