• ফাস্ট ট্র্যাক আদালত নিয়ে নবান্নে পাঠানো পুরনো চিঠি ভাসালেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী, এল পাল্টাও
    আনন্দবাজার | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ধর্ষণের বিরুদ্ধে কড়া আইন আনার লক্ষ্যে মঙ্গলবারই বিধানসভায় ‘অপরাজিতা’ বিল পাশ করিয়েছে রাজ্য। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠানো পুরনো চিঠি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তিনি বর্তমানে কেন্দ্রের সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে লেখা একটি চিঠি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন রিজিজু। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, বাংলার জন্য ১২৩টি বিশেষ ফাস্ট ট্র্যাক আদালত অনুমোদিত। কিন্তু সেগুলির জন্য রাজ্যের সম্মতি পাওয়া বাকি, সে কথা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনি। রাজ্য সরকার যাতে সেটিতে সম্মতি দেয়, মমতাকে পাঠানো চিঠিতে সেই অনুরোধ জানিয়েছিলেন রিজিজু। ওই চিঠিতে এও উল্লেখ ছিল, রাজ্যের থেকে সম্মতি মিললে কেন্দ্রও সেগুলির জন্য নিয়ম মেনে অর্থ দিতে প্রস্তুত। কেন্দ্রের থেকেও সব রকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি।

    উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিধানসভায় বক্তৃতা করার সময়েই রাজ্যের ফাস্ট ট্র্যাক আদালত নিয়ে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে বর্তমানে কতগুলি ফাস্ট ট্র্যাক আদালত রয়েছে, কতগুলি মামলার সেখানে নিষ্পত্তি হয়েছে সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মমতা। তিনি বলেন, “রাজ্যে ৮৮টি ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের টাকা আগে কেন্দ্রীয় সরকার বহন করত। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে সেই টাকা দেওয়া কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও বর্তমানে আমাদের রাজ্যে ৮৮টি ফাস্ট ট্র্যাক আদালত রয়েছে। মহিলাদের জন্য ৫২টি বিশেষ আদালত রয়েছে। যাতে মহিলাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের মামলাগুলির দ্রুত বিচার হয়। এই আদালতগুলিতে এখনও পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৯২ হাজার ৬২০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার মধ্যে ৩ লাখ ১১ হাজার ৪৭৯টি মামলার নিষ্পত্তি ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে মহিলা সংক্রান্ত সাত হাজার মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আমাদের হাতে নেই।”

    মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য বিধানসভায় এই মন্তব্যের পরেই ফের ফাস্ট ট্র্যাক আদালত প্রসঙ্গে নবান্নে পাঠানো পুরনো চিঠি পোস্ট করলেন রিজিজু। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সেই চিঠিতে লিখেছিলেন, “বাংলার জন্য ১২৩টি বিশেষ ফাস্ট ট্র্যাক আদালত অনুমোদিত, যার মধ্যে ২০টি পকসো আদালতও রয়েছে। কিন্তু সেগুলিতে এখনও সম্মতি দেয়নি রাজ্য সরকার।” তিনি আরও লিখেছিলেন, “২০২১ সালের মে মাসের হিসাব অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণ ও পকসো সংক্রান্ত ২৮ হাজার ৫৫৯টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।”

    প্রসঙ্গত, আরজি কর-কাণ্ডের পর থেকেই ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইনের দাবি আরও জোরালো হয়েছে। দোষী যাতে দ্রুত শাস্তি পান, সেই দাবি উঠেছে। এই আবহেই গত ২২ অগস্ট প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন মমতা। আর্জি ছিল, ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইনের ব্যবস্থা করা হোক। এর পর কেন্দ্র থেকে ২৫ অগস্ট একটি চিঠি আসে নবান্নে। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন রুখতে দেশে কী কী আইন রয়েছে, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে মমতাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী। ওই চিঠিতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছিলেন ১২৩টি ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের কথা। কিন্তু ২০২৩ সালের জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত রাজ্যে একটিও পকসো আদালত চালু হয়নি বলে দাবি করেছিলেন তিনি। সেই চিঠির পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের একটি চিঠি লেখেন। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘আমি যে গুরুত্ব দিয়ে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, সমাজ সম্পর্কিত বিষয়টি নিয়ে ভেবেছিলাম, গতানুগতিক জবাবি চিঠিতে সেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।’’

    এরই মধ্যে এ বার পুরনো একটি চিঠি ভাসিয়ে তুললেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী। তাঁকে পাল্টা বিঁধে রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “মঙ্গলবার বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন সময়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু অর্ধসত্য কথা না বলে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা শুনুন এবং জানুন কী ভাবে আইন ব্যবস্থা পরিচালনা করতে হয়। এখন দেশের কাছে সমস্যা হল, ধর্ষণ ও ধর্ষণ করে খুনের মতো অপরাধ। নরেন্দ্র মোদীর সরকার যদি সেই সমস্যার সমাধান করতে চায়, তাহলে অবিলম্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথে চলুক।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)