আরজি করের ঘটনার জেরে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে আউটডোর পরিষেবা ও গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার কমেছে ৫০ শতাংশ। নবান্নকে দেওয়া রিপোর্টে স্বাস্থ্য দপ্তর এই তথ্য জানিয়েছে। সোমবার-ই স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এই রিপোর্ট পেশ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী-ই এ রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের দায়িত্বে রয়েছেন। রিপোর্টে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এক ধাক্কায় সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আউটডোর পরিষেবা ও রোগী ভর্তির পরিমাণ কমেছে।শুধু সরকারি হাসপাতালে রোগী কমছে না, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বেড়েছে স্বাস্থ্য সাথীর খরচও। দেখা গিয়েছে, ১০ অগস্ট ডাক্তারদের কর্মবিরতি চালু হওয়ার পর থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের ১৫০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ মঞ্জুর করা হয়েছে হাসপাতালগুলির বিল মেটাতে। এজন্য দৈনিক গড়ে প্রায় ৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আগে এই অঙ্ক ছিল ৩ কোটি টাকা। কলকাতার একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল থেকেই রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেশি টাকা বরাদ্দের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে।
নবান্ন সূত্রের খবর, রিপোর্টে স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, আরজি করে কর্তব্যরত অবস্থায় চিকিৎসক ছাত্রী ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনে পাশে দাঁড়িয়েছেন সিনিয়র ডাক্তাররাও। যার প্রভাব পড়ছে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবায়। শুধু আরজি কর হাসপাতালেই নয়, রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও একই চিত্র লক্ষ্য করা গিয়েছে।
সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে, আরজি কর এবং এসএসকেএম হাসপাতালে। চিকিৎসা মিলবে না, এই আশঙ্কায় রোগীরা সরকারি হাসপাতালে আসতে চাইছেন না। কর্ম বিরতিতে আউটডোর পরিষেবা ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছে। পাশাপাশি সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে রোগী ভর্তির পরিমাণও ২৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার কমেছে ৫০ শতাংশ। স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসেবে, সপ্তাহে রাজ্য জুড়ে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার হয়।
প্রসঙ্গত, জুনিয়র ডাক্তারদের কর্ম বিরতির জেরে কি প্রভাব স্বাস্থ্য পরিষেবায় সেই রিপোর্ট নবান্ন চেয়েছিল স্বাস্থ্য দপ্তরের থেকে। সোমবারই রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব এই রিপোর্ট পেশের পাশাপাশি হাসপাতাগুলির বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলার সময় সরকারি মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা সঙ্কটের জন্য মৃত্যুর হার কেমন স্বাস্থ্য দপ্তরকে তা বিশ্লেষণ করে দেখতে বলেছে নবান্ন।
স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনায় হাসপাতালের নিরাপত্তা পরিকাঠামোর প্রসঙ্গটি উঠে আসে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। পরে প্রয়োজন মতো আরও অর্থ বরাদ্দ করা হবে।