• বায়েমেট্রিক হাজিরা থেকে ডিজিটাল ক্লাস, শোরগোল ফেলে দিয়েছে বর্ধমানের এই প্রাইমারি স্কুল
    ২৪ ঘন্টা | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • পার্থ চৌধুরী: নিজে তথ্যপ্রযুক্তি শিখেছেন। ছোট থেকেই কম্পিউটার তার ধ্যানজ্ঞান। নিজের শিক্ষাকে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভাগ করে নিতে চেয়ে অভিনব উদ্যোগ প্রাথমিক স্কুলের প্রধানশিক্ষকের। অভিনব এই উদ্যোগের পাশে রয়েছেন স্কুলের ছ'জন শিক্ষকও।  এই স্কুল আজ ডিজিটাল লার্নিংয়ের পথে যাত্রা শুরু করল। বর্ধমান শহরের শ্যামসায়রের পাড়ে রামকৃষ্ণ সারদাপীঠ প্রাথমিক স্কুলেই এই অচলায়তন ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে।

    ডিজিটাল প্রাইমারি  স্কুল! শুনলে অবাক লাগতেই পারে! দিল্লিতে নয়, এই বাংলায়। তাও আবার সরকারি স্কুলে। যেখানে অনেক জায়গায় ছাত্রদের আগ্রহের অভাবে স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে নতুনভাবে শুরুর হিম্মত দেখাচ্ছেন ওই স্কুলের শিক্ষকেরা। প্রাথমিক স্কুলে ডিজিটাল ক্লাস রুম চালু হল সোমবার থেকে। প্রাক-প্রাথমিক বিভাগ থেকে চতুর্থ শ্রেণীর প্রতিটি ক্লাসরুমেই প্রোজেক্টর দিয়ে অঙ্ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় পড়ছেন পড়ুয়ারা। ক্লাসে ঢোকার আগে কর্পোরেট স্টাইলে বুকে ঝোলানো  পরিচয় পত্র বায়োমেট্রিক স্ক্যান করে হাজিরা নিশ্চিত করছেন পড়ুয়া থেকে শুরু করে শিক্ষকরা। হাজিরা দিলেই অভিভাবকের মোবাইলে মেসেজ চলে যাচ্ছে। এমনকি স্কুলে আসতে না পারলে ওই অ্যাপের মাধ্যমে অভিভাবকরা স্কুলে না আসার কারণ জানাতে পারবেন। এখানেই শেষ নয়, স্কুলে না আসতে পারলেও, বাড়িতে যদি অ্যান্ড্রয়েড ফোন থাকে তাহলে সেদিনের ক্লাস ওই অ্যাপে রেকর্ড করা ক্লাসও দেখতে পারবে পড়ুয়ারা।

    স্কুলের প্রধান শিক্ষক পলাশ চৌধুরী জানান, এতে লাভ হবে অনেক। কোনো ভাল ছাত্র যদি কোনো কারণে স্কুলে না আসতে পারে, তাকে রেকর্ড পাঠিয়ে দেওয়া হবে। স্ক্যান করে পাঠ্যবস্তু পাঠানো হবে।তাছাড়া স্কুলে ছাত্রের উপস্থিতি লক্ষ্য রাখতে পারবেন অভিভাবক।

    সব কিছুর একটা শুরু থাকে। আজ সেই নতুন ধারার পাঠ দেবার যাত্রা শুরু।  স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, প্রাক প্রাথমিক বিভাগের ক্লাসে রঙ চেনানো হচ্ছে কম্পিউটার দিয়ে প্রজেক্টরের মাধ্যমে। স্কুলের কচিকাচারা কাঁপা কাঁপা হাতেই মাউস ক্লিক করে সাদা কালো সবুজ হলুদ রঙ চিনিয়ে দিচ্ছে। অঙ্কের  ক্লাসে স্থানিক মান সহ অন্যান্য সুত্রও প্রোজেক্টারে আগ্রহ ভরে দেখছে ঈশানী হেলা, তৃষা কুন্ডু, সায়নী দত্তরা ৷ এই পদ্ধতিতে আগ্রহ বাড়বে দাবি শিক্ষকদের। এছাড়া ভীতি কাটবে অঙ্কের। কিন্তু কারা এতে অংশ নেবে? জানা গেছে, স্কুলের ৫টি ক্লাসের মোট ২১৪ জন পড়ুয়াই এই সুযোগ পাবে।

    স্কুলের প্রধান শিক্ষক পলাশ চৌধুরী বলেন, এই উদ্যোগ স্কুল থেকেই নেওয়া হয়েছে। নিজেদের উদ্যোগ এটি। কেন এমন ভাবলেন তাঁরা? তাদের মতে,' প্রাথমিক স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে এবং ছোট থেকেই কম্পিউটারের প্রতি দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এই উদ্যোগ। পাশাপাশি পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে যেসব পড়ুয়া একা স্কুলে আসে তাদের অভিভাবকরা  বাড়িতে বসেই ছেলেমেয়েরা স্কুলে পৌঁছল কিনা সেটা জানতে পারবে। একইসঙ্গে প্রতিদিনের ক্লাস রেকর্ড করা হবে। যা ঘরে বসেই পড়ুয়া এবং অভিভাবকরা দেখতে পাবেন। '

    স্কুলের সহ শিক্ষিকা লাবণ্য রায় জানান, ব্লাকবোর্ড এর মাধ্যমে পড়ার চেয়ে প্রজেক্টার দিয়ে পড়তে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তাদের বোঝাতে সুবিধাও হচ্ছে। তিন চারদিনেই এই ফারাক তাদের চোখে পড়েছে।

    তিনি জানান, 'স্কুলের এই অ্যাপের মাধ্যমেই শিক্ষা -সংক্রান্ত বিভিন্ন ইন্টারনেটের লিঙ্ক, বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান ও করা যাবে। যা স্কুলের সাথে পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের যোগাযোগ আরো সুদূঢ়  করবে।'

    স্কুলের পড়ুয়া সৌমজিৎ দাস, জয় ভুঁইরা জানাচ্ছে, প্রতিদিন স্কুলে এসে বই খাতা নিয়ে  পড়তে এতটাও ভাল লাগত না। এখন থেকে রোজ কম্পিউটার আর বড় স্ক্রিনে পড়ব তাই খুব আনন্দ হচ্ছে। যেসব ঘরে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সুবিধা নেই, তারাও এর সুযোগ স্কুলে এসে পাচ্ছেন।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)