আন্দোলনে উত্তাল বাংলা। তবুও স্বস্তি নেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির। নাগরিক আন্দোলনের রাশ যে কিছুতেই তাদের হাতে আসছে না। নাগরিক সমাজের পাশাপাশি তারাও আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়াচ্ছে। তারাও বিচার চেয়ে মিছিল করছে। তবুও আরজি কর আন্দোলনের লাগাম এখনও মানুষের হাতেই। ফলে এই আন্দোলন নিয়ে শাসক শিবিরের মতো কপালে ভাঁজ বিরোধী শিবিরেরও।আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে প্রতিদিনই রাজপথে আছড়ে পড়ছে নাগরিক ক্ষোভ। স্বাভাবিক ভাবেই সেই আঁচে রাজনীতির রুটি সেঁকতে চাইছে বিরোধী দলগুলি। কিন্তু আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি বলছে, তারা পারছে না। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, আরজি কর আন্দোলনের সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য হলো সঙ্কীর্ণ দলীয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকা।
মঙ্গলবারই যেমন বামফ্রন্টের মহামিছিলের থেকেও অনেক বেশি নজর কেড়েছে পাটুলি থেকে উল্টোডাঙা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের মানববন্ধন কর্মসূচি। রাস্তার একপাশে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়েছেন বহু সাধারণ মানুষও। রাজনৈতিক দলের মহামিছিল তো শহরে অনেক হয়েছে, কিন্তু এমন দৃশ্য কবে দেখেছে কলকাতা!
সোমবার রাতে ফিয়ার্স লেনে জুনিয়র ডাক্তাররা সারারাত জেগেছিলেন। রাতেই সেখানে হাজির হয়েছিলেন বিজেপির দুই প্রতিনিধি- তমলুকের সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। কিন্তু তাঁদের রীতিমতো 'গো ব্যাক' স্লোগান শুনতে হয়। আরজি করের জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চেও সহমর্মিতা জানাতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বিজেপির কয়েকজন নেতানেত্রী। কিন্তু হাওয়া বুঝে তাঁরা আগেই ব্যাক গিয়ারে চলে যান।
বিজেপির এক রাজ্য নেতার কথায়, '১৪ তারিখের আগে পর্যন্ত আরজি কর আন্দোলনের রাশ কে নেবে, তা নিয়ে আমাদের সঙ্গে সিপিএমের লড়াই চলছিল। কিন্তু মহিলাদের রাত দখল কর্মসূচির সাফল্য সব হিসেব উল্টে দিয়েছে। এখন এটা মানুষের আন্দোলন। জোর করে সেখানে দলীয় পতাকা নিয়ে ঢুকতে যাওয়া বোকামো। তার পরেও যাঁরা সে কাজটা করতে যাচ্ছেন, তাঁরা রাজ্যের শাসকদলেরই সুবিধা করে দিচ্ছেন পরোক্ষে।'
বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'সাধারণ মানুষ পতাকা ছাড়া রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেছে। এর থেকেই বোঝা যায় দেশে গণতন্ত্র কতটা শক্তিশালী। আমরা তো নাগরিক আন্দোলনের রাশ নিতে চাই না। নাগরিক আন্দোলন যে রকম চলছে, চলুক। আমরা যে রকম আন্দোলন করছি, করে যাব। এই দুটোর কোনও বিরোধ নেই। এখনই সব কিছু একসূত্রে গাঁথতে হবে, তারই বা কী মানে আছে।'
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'আমরা তো গণ-আন্দোলন দখল করতে চাই না। প্রথম তো আমাদের ছেলেমেয়েরাই আরজি কর ইস্যুতে লড়াই শুরু করেছিল। কিন্তু রাজ্যের মহিলারা রাত দখলের ডাক দেওয়ার পর এটা গণ-আন্দোলনের চেহারা নিয়েছে। সেখানে আমরা অনেকেই সাধারণ নাগরিক হিসেবে থেকেছি। কিন্তু রাশ টানতে যাইনি। যেতে চাইও না।'
আরজি কর ইস্যুতে খুবই সরব টলিউড অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। তিনি ফিয়ার্স লেনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান বিক্ষোভে সোমবার রাতও জেগেছেন। তাঁর কথায়, 'রাজনৈতিক দলগুলির নেতা-নেত্রীদের বলছি, আপনারা এই আন্দোলন থেকে যত দূরে থাকবেন, তত ভালো। এটা সাধারণ মানুষের আন্দোলন। একটা বিচারের জন্য মানুষ লড়াই করছে, রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য নয়।'
টলিউডের আর এক অভিনেত্রী উষসী চক্রবর্তী বলেন, 'এটাকে আমি নিছক নাগরিক আন্দোলন বলতে চাই না। এটা গণ-আন্দোলন। যেখানে দলীয় পতাকা ছাড়া রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষ সামিল হয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও নিজের দলীয় রাজনৈতিক পরিচয় ছেড়ে এই গণ-আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। এটা তো সেই অর্থে কোনও দলীয় রাজনৈতিক আন্দোলনই নয়।'