এই সময়, শিলিগুড়ি: অভিযুক্তের সাইকেল এবং তার সাইকেল চালানোর কায়দাই নাবালিকার ধর্ষণ-খুনের মামলায় অন্যতম এভিডেন্স হয়ে উঠল আদালতে।
গত বছর ২১ অগস্ট শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় ধর্ষণের পরে এক নাবালিকাকে খুন করে মহম্মদ আব্বাস নামে এক দুষ্কৃতী। পুলিশি তদন্তে প্রমাণিত হয়, স্কুল থেকে বাড়িতে ফেরার পথে সাইকেলে নাবালিকার পিছু নেয় আব্বাস।নাবালিকাকে ভুলিয়ে তার সাইকেলের কেরিয়ারে বসিয়ে নিয়ে যায় মাটিগাড়ার একটি পরিত্যক্ত গুদামে। সেখানে নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের পরে সাইকেল চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে খুনের ন’ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ আব্বাসকে বাড়ি থেকে সাইকেল সমেত গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তবে তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে আদালতে এভিডেন্স চাই।
আব্বাসের ওই সাইকেলই এই মামলায় অন্যতম এভিডেন্স হয়ে দাঁড়ায়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা হয়, কী ভাবে সাইকেল চালায় আব্বাস। তার সাইকেল চালানোর সেই কায়দাই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞকে দিয়ে ফের পরীক্ষা করানো হয়। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের সামনে আব্বাসকে দিয়ে ফের সাইকেলটি চালানো হয়। রিপোর্টে স্পষ্ট হয়, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা সাইকেল আরোহী এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের সামনে চালানো সাইকেল আরোহী একই ব্যক্তি। অর্থাৎ, খুনের দিন আব্বাসই ওই নাবালিকা স্কুলপড়ুয়াকে সাইকেলে তুলে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়েছিল।
বুধবার এই মামলায় আব্বাসকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন শিলিগুড়ি আদালতের বিচারক। কাল, শুক্রবার সাজা ঘোষণা। মামলার সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের কাছে অপরাধ প্রমাণের অনেক এভিডেন্সই ছিল। তবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এভিডেন্স এই সাইকেল এবং আব্বাসের সাইকেল চালানোয় কায়দা। সেটাই অপরাধ প্রমাণে বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছে।’
গত বছর শিলিগুড়িতে এই নাবালিকা খুনের ঘটনায় তোলপাড় পড়ে যায়। বন্ধ-আন্দোলনে সরগরম হয়ে ওঠে শিলিগুড়ি। রাজ্য সরকারও বিশেষ গুরুত্ব দেয় এই মামলায়। শুরু হয় তদন্ত। এ বছরের জানুয়ারি মাসে মামলার শুনানি শুরু হয়। দোষীর ফাঁসি চেয়ে নিয়মিত ভাবে আদালতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। মোট ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম সাক্ষ্য ছিল এক পুলিশ কর্মী এবং তেরো বছরের এক নাবালিকার।
ওই পুলিশকর্মীই আব্বাসকে সাইকেলে নাবালিকাকে চড়িয়ে মাটিগাড়ার দিকে যেতে দেখেছিলেন। খুনের ঠিক পরেই তেরো বছরের এক কিশোরী পরিত্যক্ত গুদামঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে ভারী কিছু দিয়ে আঘাতের শব্দ পায়। তার খানিক পরেই মুখে রুমাল বেঁধে আব্বাসকে সাইকেল নিয়ে বেরোতে দেখে সে।
সিসিটিভি ফুটেজের ব্যক্তি আর ওই কিশোরীর দেখা ব্যক্তিকে মেলাতেই আব্বাসের সাইকেল চালানোর ভঙ্গি ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়। তার ফলেই নিশ্চিত হয় আব্বাসের অপরাধ। আব্বাসের পোশাক থেকে নাবালিকার রক্তের ছোপও মিলেছে। তাছাড়া যে ইঁট দিয়ে নাবালিকাকে মারা হয়েছিল, তাতেও পাওয়া গিয়েছে রক্তের ছোপ।