সৌরভ মাজি, বর্ধমান: পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানো হচ্ছে যেন। দিন যত যাচ্ছে অভীক দে, বিরূপাক্ষ বিশ্বাসদের একটার পর একটা দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসছে। এবার ক্যান্টিন দুর্নীতি। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ক্যান্টিনে খাবার খেয়ে বিল না মেটানো। ক্যান্টিনে দুইজনের মিলিত বকেয়া প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আবার বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বেআইনিভাবে আরও একটা ক্যান্টিন চালু করার মতো ঘটনা সামনে আসতে শুরু করেছে। বুধবার এই নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন চিকিৎসক, পিজিটি, জুনিয়র ডাক্তাররা। বিশাল অঙ্কের বকেয়া থাকায় সমস্যায় পড়া ক্যান্টিন মালিকও সরব হয়েছেন এই নিয়ে।
থ্রেট সিন্ডিকেটের পাণ্ডা চিকিৎসক অভীক দে, বিরূপাক্ষ বিশ্বাসরা রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে যেভাবে মৌরসীপাট্টা চালাতো তা প্রকাশ্যে এনেছেন আর জি কর কাণ্ডে আন্দোলনরত চিকিৎসক, জুনিয়র ডাক্তার, পিজিটি-রা। এবার বর্ধমান মেডিক্যালে অভীক, বিরূপাক্ষদের ক্যান্টিন দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। বর্ধমান মেডিক্যালের প্রশাসনিক ভবনের চারতলায় অভীকের জন্য একটি ঘর বরাদ্দ ছিল। সেখানেই বিভিন্ন দিন আসর বসতো। আনাগোনা ছিল বর্ধমান শহরের প্রভাবশালীদেরও। আর সেই আসরে খাবার থেকে দামি সিগারেট, ঠান্ডা পানীয়, স্ন্যাক্সের অর্ডার দেওয়া হত ক্যান্টিন থেকে। সবই ধারে। দিনের পর দিন সেই সব ক্যান্টিনের বিল বেড়েই যেতো। খাতায় বাকির পরিমাণ বেড়ে গেলেও তা মেটানোর কোনও ইচ্ছাই ছিল না অভীক-বিরূপাক্ষদের। এতদিন ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। আর জি কর মেডিক্যালের ঘটনায় ভয় ভেঙে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন।
মেডিক্যাল কলেজের ১ নম্বর বয়েজ হস্টেলের নীচে ক্যান্টিন রয়েছে শেখ মাখনের। পড়ুয়াদের সবার মাখনদা। তাঁর কাছে বিরূপাক্ষের বকেয়া রয়েছে ২৩ হাজার ৮০০ টাকা। মাখনবাবু জানান, দিনের পর দিন দামি সিগারেট থেকে অন্যান্য জিনিসপত্র ধারে কিনেছেন। খাতায় সব লেখা আছে। মাইনে পেলেই টাকা মিটিয়ে দেবে বলে আশ্বাস দেয়। কিন্তু বিল মেটায় না। সম্প্রতি আবার পাওনা টাকা আদায়ে ফোন করলেও ধরে না। ধরলেও কার্যত হুমকি দেয়। পাওনা আদায়ে আইনি পদক্ষেপ করার ভাবছেন মাখনবাবু।
এক পিজিটি বলেন, “থ্রেট কালচারের হোতা এই অভীক-বিরূপাক্ষরা। দুর্নীতিতে এতটাই ডুবেছে যে সামান্য ক্যান্টিনের বিলটাও মেরে দিতে চাইছে। টাকার লোভ, ক্ষমতার দম্ভ তাদের কোথায় নিয়ে গিয়েছে। অভীক-বিরূপাক্ষদের সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকার বিল বাকি রেখেছে ক্যান্টিনে।” মেডিক্যাল কলেজের আরও একটি ক্যান্টিন চালু হয়েছিল পিজিটি হস্টেলের নীচে। সেই ক্যান্টিন বেআইনিভাবে করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ তুলেছেন জুনিয়র ডাক্তার, পিজিটিরা। এক পিজিটি বলেন, “বর্ধমানের এক প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠকে ক্যান্টিন চালু করতে দেওয়া হয়েছিল। বিনিময়ে ১৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন অভীক-বিরূপাক্ষরা। ওই নেতা প্রায়ই আসতেন অভীকের ঘরে। জন্মদিন পালন সহ বিভিন্ন আসরে দেখা গিয়েছে ওই নেতাকে।” অভীক, বিরূপাক্ষর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।