দুই তৃতীয়াংশ চিকিৎসা-বর্জ্য ভ্যানিশ! অবাক তদন্তকারীরাও
এই সময় | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আরজি কর ও এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বেড সংখ্যা প্রায় একই। অথচ এনআরএসে যে পরিমাণ চিকিৎসা-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, আরজি করে পরিমাণটা তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ। তাহলে বাকি দুই তৃতীয়াংশ গেল কোথায়?সন্দীপ ঘোষ আরজি করে অধ্যক্ষ থাকাকালীন এই বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা-বর্জ্য কী ভাবে ভ্যানিশ হতো, তার খোঁজ করতে গিয়েই ওই হাসপাতালে চিকিৎসা-বর্জ্য পৃথকীকরণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা রকম অনিয়ম উঠে আসে। আর তা নিয়ে রিপোর্ট তৈরির দায়েই প্রথম সন্দীপের কোপে পড়েন আরজি করের তৎকালীন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। তিন দিনের মধ্যে বদলিও হয়ে যেতে হয় তাঁকে।
আখতার যে কমিটির কনভেনর ছিলেন, তাদের সুপারিশ ছিল, ভ্যাটের সামনে সিসিটিভি লাগানো হোক। যাতে বোঝা যায়, ঠিকঠাক ভাবে বর্জ্য পৃথকীকরণ এবং সেগুলি নষ্ট করা হচ্ছে কি না। এখন চিকিৎসা-বর্জ্য সংক্রান্ত সেই সব দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করছে সিবিআই। অভিযোগ, সন্দীপের সঙ্গেই সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার তাঁর অতিরিক্ত নিরাপত্তা রক্ষী আফসার আলি খানের সাহায্যেই এই দুর্নীতি চলত।
দেখা যাচ্ছে, আরজি করের সমমানের সরকারি মেডিক্যাল কলেজে এনআরএসে গড়ে যেখানে প্রতি মাসে ২১-২৮ হাজার কেজি চিকিৎসা-বর্জ্য জমা হয়, সেখানে আরজি করে সেই বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় মাসে মাত্র ৭-১০ হাজার কেজি। ২০২২-এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি মাসে এনআরএসে মোট জমা হওয়া চিকিৎসা-বর্জ্যের মোট পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৬৫০ কেজি।
সেখানে ওই সময়কালে মোট ৪৯ হাজার ৬০২ কেজি বর্জ্যই জমা হয়েছিল আরজি করে। অথচ দু’টি হাসপাতালেই রয়েছে প্রায় ২১০০টি করে বেড, যার অধিকাংশই সব সময়ে ভর্তি থাকে।
তাহলে ছ’ মাসে এই প্রায় ১ লক্ষ কেজি-র বেশি চিকিৎসা-বর্জ্য কোথায় গেল?
আরজি করের প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের সন্দেহ হয়, হাসপাতালের শীর্ষস্থানীয় কর্তার সঙ্গে জনৈক শঙ্কর রাউত, মহম্মদ আফজল এবং সিবিআইয়ের হাতে এখন ধৃত আফসার আলি খানের যোগসাজশেই ওই বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা-বর্জ্য সরকারি বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পাচার হয়ে যেত বাইরে। ওই বর্জ্যের অন্তত ৭০ শতাংশই স্যালাইনের বোতল, সিরিঞ্জ, গ্লাভস, টুর্নিকেট ইত্যাদির মতো প্লাস্টিকজাত এমন বর্জ্য, যেগুলি ‘রিসাইকল’ বা প্রক্রিয়াকরণের পর আবার ব্যবহারযোগ্য উপকরণ দিয়ে তৈরি। আর সেগুলো পাচার করেই লক্ষ লক্ষ টাকার বেআইনি ব্যবসা চলত আরজি করে।
আখতার আলির যে অভিযোগের ভিত্তিতে আরজি করে দুর্নীতির তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে সঁপেছে কলকাতা হাইকোর্ট, সেই অভিযোগ পত্রে স্পষ্টই লেখা রয়েছে, চিকিৎসা-বর্জ্য নিয়ে চলা অনিয়মের মূল চক্রী ছিলেন অধ্যক্ষ সন্দীপ পাল আর তাঁর শাগরেদ ছিলেন আফসার আলি খান। আপাতত দু’জনেই রয়েছেন সিবিআই হেফাজতে।
আরজি কর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতাল মূল দু’টি বড় ভ্যাটে ইচ্ছাকৃত ভাবেই চিকিৎসা-বর্জ্যের সঙ্গে মিশিয়ে রাখা হতো পুরবর্জ্য। ব্যবহার করা হতো না দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ নির্ধারিত হলুদ, নীল, লাল ও কালো প্যাকেট। প্রথম তিনটি রঙের প্যাকেটে চিকিৎসা-বর্জ্য থাকার কথা থাকলেও নজরদারি এড়িয়ে তা ফেলা হতো পুরসভার ভ্যাটে। ফলে সরকার নির্ধারিত যে বেসরকারি বহুজাতিক সংস্থার হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা-বর্জ্য সংগ্রহ করে তা হলদিয়ার প্লান্টে নিয়ে গিয়ে নষ্ট করে ফেলার কথা, সেই সংস্থা প্রত্যাশিত পরিমাণের বর্জ্যই পেত না আরজি কর থেকে।