• শিশুর গলায় ভোজালি ঠেকিয়ে ভয়াবহ ডাকাতি, আসানসোল রেল কোয়ার্টারে আতঙ্ক
    বর্তমান | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: মায়ের কোলে ঘুমিয়ে ছিল দু’বছরের শিশুসন্তান। চুপিসারে তাকে তুলে গলায় ভোজালি ধরল দুষ্কৃতীরা। তারপর মা’কে ঘুম থেকে তুলে শিশুর গলা কেটে দেওয়ার হুমকি! তবে, সন্তানকে বাঁচাতে হলে শর্ত একটাই—বাড়ির সব আলমারির চাবি তুলে দিতে হবে তাদের হাতে। ভোর রাতে ঘটনার আকস্মিকতায় বাকরুদ্ধ রেলকর্মীর স্ত্রী শ্বেতা সিং। কথা না বাড়িয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে প্রতিটি আলমারির চাবি তুলে দেন তিনি। তিন সন্তানকে কোলে আঁকড়ে বিছানার একপাশে থাকলেন সিঁটিয়ে। চোখের সামনে দেখলেন ডাকাতদের ভয়াবহ আস্ফালন। একটার পর একটা আলমারি খুলছে। বিয়ের প্রিয় গয়না থেকে শুরু করে নগদ লুট করছে তারা। এক ঘণ্টার অপারেশনে সব সাফ! সবমিলিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার সম্পদ নিয়ে বিনা বাধায় চম্পট দিল তারা। যাওয়ার আগে ফের শাসানি, ‘চিৎকার জুড়লে ফিরে এসে তোর সন্তানদের জানে মেরে ফেলব।’ মঙ্গলবার রাতে এমনই হাড়হিম করা ডাকাতির ঘটনার সাক্ষী থাকল আসানসোল দক্ষিণ থানার দোমাহানি রেলকলোনি। রাত তিনটে থেকে চারটে পর্যন্ত দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালায় বলে পুলিসকে জানিয়েছেন শ্বেতা। 

    ঘটনার পরই কাঁপুনি ধরেছে রেল কলোনিতে। প্রত্যেক রেলকর্মীরই নাইট শিফটে ডিউটি পড়ে। রাতে কোয়ার্টারে মহিলারা একাই থাকেন। গতকাল রাতে শ্বেতাও একাই ছিলেন। তাঁর বাড়িতে যেভাবে তালা ভেঙে ঢুকে ডাকাতি হয়েছে, তাতে পাশের কোয়ার্টারের মানুষও আতঙ্কিত। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। রেলকর্মীদের অভিযোগ, কোয়ার্টারের সামনেই রয়েছে স্লিপ মাঠ। সেখানকার একটি পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে নেশাড়ুদের আড্ডা। সন্দেহ, নেশার টাকা জোগাড় করতেই ডাকাতিতে নামছে এলাকার দুষ্কৃতীরা। আক্রান্ত বধূর দাবি, দুষ্কৃতীদের মুখ ঢাকা থাকলেও গলার স্বর শুনে পরিচিত মনে হয়েছে। পুলিসকেও তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন। ডিসি ধ্রুব দাস বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’  

    আসানসোলের দোমাহানি রেল কলোনি যথেষ্ট বড়। পাঁচশোর বেশি কোয়ার্টার রয়েছে। ওই স্লিপ মাঠের উল্টো দিকের ৮৩৬ নম্বর কোয়ার্টারটি ভূপেন্দরকুমার সিংয়ের। তিন নাবালক সন্তান, স্ত্রী ছাড়াও তাঁর বৃদ্ধা মা থাকেন। মঙ্গলবার রাতে ভূপেন্দরবাবু ও তাঁর মা বাইরে ছিলেন। দুই মেয়ে আট বছরের কাভিয়া, ছ’ বছরের নাভিয়া ও দু’বছরের রূদ্রাংশকে নিয়ে একাই ছিলেন স্ত্রী শ্বেতা। কোয়ার্টারের বাইরে গ্রিলের দরজা। সেটি তালা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তাঁরা। শ্বেতা জানিয়েছেন, বাইরের গেটে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে দুষ্কৃতীরা। ডেকে তোলেন তাঁকে। চোখ খুলেই তিনি দেখতে পান রুদ্রাংশের গলায় ভোজালি ধরে রয়েছে এক ডাকাত। তারপর সব আলমারির চাবি নিয়ে চলে লুটপাট। ঘরের ভেতরে ছিল দু’জন দুষ্কৃতী। বাইরে নজর রাখছিল দু’জন। পাশাপাশি একাধিক কোয়ার্টার থাকলেও সন্তানদের জীবনের কথা ভেবে চিৎকার করার সাহস পাননি শ্বেতা। তিনি জানিয়েছেন, লুটের মালপত্র নিয়ে দু’জন দুষ্কৃতী বেরিয়ে যাওয়ার পরও বাইরে থাকা দু’জন বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিল। যাতে আমি কোনওভাবেই চিৎকার করার সাহস না পা‌ই। শ্বেতা বলছিলেন, ‘ওরা চলে গেলে পাশের কোয়ার্টারের লোকজনকে সব জানাই। ভোর হতে না হতেই রেলকর্মীরা জড়ো হয়ে যান।’ গৃহকর্তা ভূপেন্দর বলেন, ‘খুবই আতঙ্কে রয়েছি। প্রায়ই নাইট ডিউটি করতে হয়। কোয়ার্টারে মহিলা ও শিশুরা একাই থাকে। আরপিএফ ও আসানসোল দক্ষিণ থানায় অভিযোগ করেছি। প্রায় ১০ লক্ষ টাকার সামগ্রী লুট হয়েছে।’  
  • Link to this news (বর্তমান)