• বিক্ষোভে উত্তাল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল, চাপে পড়ে রাতেই ইস্তফা দিলেন ডিন
    বর্তমান | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: পরীক্ষায় কারচুপি সহ নানা অনৈতিক কাজের অভিযোগে বুধবার উত্তাল হল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ। প্রিন্সিপাল ডাঃ ইন্দ্রজিৎ সাহা, ডিন ডাঃ সন্দীপ সেনগুপ্তের বিরুদ্ধেও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। মেডিক্যাল কলেজের রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন ও জুনিয়র ডাক্তাররা প্রিন্সিপাল ও ডিনকে রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখেন। আন্দোলনের চাপে ডিন টিএমসিপি’র বহিষ্কৃত নেতা ডাঃ অভীক দে’র উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পরীক্ষা ব্যবস্থার উপর অনৈতিক হস্তক্ষেপের বিষয়টি স্বীকার করে নেন। বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন অভীক দে ফোন করে নম্বর বাড়ানো সহ  গার্ডে ঢিলেমি দেওয়ার জন্য  চাপ দিতেন। ডিনের পদত্যাগ সহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত ঘেরাও চলবে বলে আন্দোলনকারীরা জানান। শেষমেশ রাতেই অবশ্য ইস্তফা দেন ডিন ডাঃ সন্দীপ সেনগুপ্ত।

    আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, দিনের পর দিন তৃণমূলের দুই ছাত্র নেতা ডাঃ সাহিন সরকার ও ডাঃ সোহম মণ্ডল অনৈতিকভাবে টিএমসিপির ছাত্র সংসদের নামে টাকা তুলেছে। প্রিন্সিপাল স্বঘোষিত সেই ছাত্র সংসদকে মান্যতা দিয়েছেন। পাশাপাশি পড়ুয়াদের প্রাণনাশ ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করা হয় ওই ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে। জুনিয়র ডাক্তার সাকিল পারভেজ বলেন, দিনের পর দিন নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন ওই ছাত্র নেতারা। তারমধ্যে পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকিও রয়েছে। 

    এই বিক্ষোভের মাঝে সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক চিকিৎসক এস কে রায় প্রিন্সিপাল ও ডিনের বিরুদ্ধে পরীক্ষায় কারচুপির অভিযোগ করেন। বলেন, ট্যাবুলেশনে হোয়াইটনার দিয়ে নম্বর মুছে উত্তরের লবির পছন্দের ছাত্রদের নম্বর বাড়ানো হয়েছে। ডাঃ সেনগুপ্ত ফেল করা এক ছাত্রীকে পাশ করানোর জন্য নানানরকম ভাবে চাপ সৃষ্টি করে গিয়েছেন। পরীক্ষার হলে গার্ড দেওয়ার সময়ও চাপ আসে উপর মহল থেকে।  দিনের পর দিন এসবই চলছে। যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাতে আর জি করের মতো ঘটনা যেকোনও দিন ঘটতে পারে। এর অবসান দরকার। প্রিন্সিপাল বলেন, আন্দোলনকারীরা যাঁর বিরুদ্ধে যা অভিযোগ করেছেন, সব উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে।  অন্যদিকে, ডিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্ত আমি চাই। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে, নিজে থেকেই সরে যাব। অভীক দে পরীক্ষার সময় ফোনে নম্বর বাড়ানো সহ, গার্ডে ঢিলেমির চাপ দিতেন। তবে আমি সেই চাপে কখনই প্রভাবিত হইনি। অভিযুক্ত ডাঃ সাহিন সরকারকে ফোন করা হলে ধরেননি। মেসেজেরও জবাব মেলেনি। যোগাযোগ করা যায়নি ডাঃ অভীক দে’র সঙ্গেও। 

    এদিকে, এদিন রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকে এসেছিলেন শিলিগুড়ি মেয়র তথা আরকেএস চেয়ারম্যান গৌতম দেব। বৈঠক শেষে জুনিয়র ডাক্তারদের আবেদনে সাড়া দিয়ে তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রিন্সিপালের সামনে জুনিয়র ডাক্তাররা মেয়রকে হস্টেলের অব্যবস্থা সহ ডিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জানান। টিএমসিপি নেতাদের হুমকি দেওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন। বেরিয়ে যাওয়ার সময় মেয়র বলেন, জুনিয়র ডাক্তাররা কথা বলতে চেয়েছিলেন। আমি তাঁদের সব অভিযোগ শুনেছি। প্রিন্সিপালকে বলেছি, যেসব আপনার এক্তিয়ারের মধ্যে রয়েছে, সেসবের ব্যবস্থা নিন। এক্তিয়ারের বাইরে থাকা বিষয়গুলি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলেছি।
  • Link to this news (বর্তমান)