• বাংলাদেশে ‘মুক্ত’এবিটি প্রধান জসিমুদ্দিন, ‘স্লিপার সেল’ চাঙ্গা করতে নাগাড়ে যোগাযোগ এপারে
    বর্তমান | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আল কায়েদার মতাদর্শে বিশ্বাসী জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের (এবিটি) প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানিকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। একঝাঁক ব্লগার খুন এবং ঢাকার হোলি আর্টিজেন কাফেতে হামলার অভিযোগে শেখ হাসিনা সরকার জসিমুদ্দিনকে জেলে পাঠিয়েছিল। গত ২৬ আগস্ট ঢাকার কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে জসিমুদ্দিন মুক্ত হওয়ার পর থেকে উল্লাস শুরু হয়েছে সে দেশের মৌলবাদী ও জেহাদি মহল। ওপারে উল্লাস শুরু হলেও, চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে এপারের গোয়েন্দাদের। গত ২৭ আগস্ট থেকে শুরু করে সোমবার পর্যন্ত যে ‘তথ্য’ পেয়েছেন গোয়েন্দারা, তাতে দেখা যাচ্ছে, কাঁটাতারের বেড়ার ওপারের ‘মেন্টর’রা নাগাড়ে ফোন করে চলেছে এপারে। স্যাটেলাইট ফোন থেকে কলগুলি আসায় দ্রাঘিমাংশ-অক্ষাংশ মেপে তা কখনও বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ, কখনও সুনামগঞ্জ আবার কখনও মৌলভিবাজার থেকে আসছে বলে জানা যাচ্ছে। এপারের মুর্শিদাবাদ-মালদহ-নদীয়া এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অংশে ১০ থেকে ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে ফোনগুলি রিসিভ করা হচ্ছে। ফোন যাচ্ছে অসমের ধুবড়ি, করিমপুর, মরিগাঁও, ত্রিপুরার ধর্মনগর, সোনামূড়া সহ আরও কয়েকটি জায়গায়। 

    নানা সূত্র থেকে গোয়েন্দারা জেনেছেন, এবিটি প্রধান জসিমুদ্দিন নিজে এবং তার সহযোগীরা, এপারের (পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরা) ঝিমিয়ে পড়া স্লিপার সেলকে ‘চাঙ্গা’ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। গোয়েন্দারা বলছেন, প্রগতিশীল ব্লগারদের খুনে অভিযুক্ত এবিটি জঙ্গি সজল আহমেদ, নয়ন গাজি, তামিম বিশ্বাস, মইনুল হাসান শামিম, আবু সিদ্দিক সোহেলর মতো কুখ্যাতরা বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এই তিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তাদের সঙ্গেই নিয়মিত যোগাযোগ করছে বাংলাদেশের জঙ্গি নেতারা। তবে জসিমুদ্দিন জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি ফোন আসছে বাংলার সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে। 

    ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আল-কায়েদার এ উপমহাদেশের সংগঠন আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (একিউআইএস) অনুমোদিত এবিটি প্রগতিশীল ব্লগার, ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক এবং অধ্যাপক সহ মোট ১৭ জনকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে খুন করে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোড়িত হয়েছিল মার্কিন প্রবাসী অভিজিৎ রায় ও ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ রাজীব হায়দারকে ‘কোতল’ করার ঘটনা। খুনের ঘটনায় যুক্তরা স্বীকার করেছিল, এবিটি প্রধানের নির্দেশেই তারা খুনগুলি করেছে। এই পর্বেই বাংলাদেশের সাভারের আশুলিয়ার একটি ব্যাঙ্কে ডাকাতিও করে এবিটি। ডাকাতি করতে গিয়ে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ও এক গ্রাহক সহ মোট ন’জনকে গুলি-গ্রেনেড চালিয়ে খুন করা হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবিটি। জেলে যেতে হয় জসিমুদ্দিন সহ এবিটি’র শীর্ষ জঙ্গিদের। গোয়েন্দারা বলছেন, এই পর্বেই এক ঝাঁক জঙ্গি পালিয়ে আশ্রয় নেয় এ রাজ্য, অসম ও ত্রিপুরায়। সেরকমই এক জঙ্গি বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ ওমর ফারুক ওরফে মহম্মদ আফতার খান, সাহাদাত হোসেন, সামশাদ মিয়াঁ ও রিয়াজুল ইসলাম এবং এপারের তাদের অস্ত্র সহবরাহকারী বসিরহাটের খোলাপোতার বাসিন্দা মনোতোষ দে’কে গ্রেপ্তার করে বেঙ্গল এসটিএফ। এরা প্রত্যেকেই ব্লগার খুন ও হোলি আর্টিজেনে হামলার সঙ্গে যুক্ত। গা-ঢাকা দেওয়া বাকিদের খোঁজে এখনও হন্যে হয়ে ঘুরছে এপারের গোয়েন্দারা। সেই পর্বেই সেই সহযোগদের সঙ্গে জসিমুদ্দিন ও তার দলবল ফের ‘সম্পর্ক’ স্থাপনের চেষ্টা চালানোয়, চিন্তা বেড়েছে গোয়েন্দাদের।

    অপরদিকে, বিএনপি-জামাত আমলের শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন জামিন পেয়ে মঙ্গলবার রাতে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। আওয়ামি লিগ নেতা-কর্মীদের নিধন-যজ্ঞের অন্যতম চক্রীর বিরুদ্ধে ১৯টি খুনের মামলা রয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)