• সর্বেসর্বা’ সন্দীপ, নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলেও তদন্তভার তাঁর!
    বর্তমান | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি করে হাসপাতাল বর্জ্য, বেআইনি পার্কিং, ক্যাফে, নিয়ম বর্হিভূতভাবে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া সহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে। আর  নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত প্রাক্তন অধ্যক্ষ নিজেই করেছেন। বেলেঘাটায় বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নথি ঘেঁটে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে সিবিআই। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনিই কী করে তদন্ত করলেন, এই নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। একইসঙ্গে আর জি করে দুর্নীতি নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরে অভিযোগ জমা পড়ার পর তারা কী ব্যবস্থা নিয়েছিল, সেটি নিয়েও খোঁজখবর শুরু হয়েছে।

    দুর্নীতির কেস রুজু করার পর সিবিআই ২৫ আগস্ট  সন্দীপ ঘোষের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে উদ্ধার হয় বেশ কিছু নথি। তা ঘাঁটতে গিয়ে তদন্তকারীদের নজরে আসে, হাসপাতালের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সেই সংক্রান্ত কপি রাখা রয়েছে প্রাক্তন অধ্যক্ষের বাড়িতে। তার মধ্যে রয়েছে কোন কোন সংস্থাকে তিনি কমিশনের বিনিময়ে কাজের বরাত দিয়েছেন, পিডব্লুডিকে বাদ দিয়ে টেন্ডার ছাড়াই কোন সংস্থাকে দিয়ে হাসপাতালে কাজ করিয়েছেন, কোভিডের সময় ওষুধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিস কেনার ক্ষেত্রে কীভাবে টাকা নয়ছয় করেছেন ইত্যাদি। নিয়মানুযায়ী যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁর কাছে এই সংক্রান্ত কোনও কপি থাকার কথাই নয়। কী কী অভিযোগ এসেছে, তা জানার কথাই নয়। নিরপেক্ষ কাউকে দিয়ে এই সংক্রান্ত তদন্ত করানোর কথা। অথচ আরজি করের ক্ষেত্রে এর উল্টোটা হয়েছে। তদন্তকারীদের প্রশ্ন যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এগুলির কপি পেলেন কোথা থেকে এবং তাঁকে কে এই তদন্তের দায়িত্ব দিল? তাঁরা জানতে পেরেছেন, অধ্যক্ষ থাকাকালীন কোথাও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ এলেই, প্রভাব খাটিয়ে তার কপি আনিয়ে নিতেন সন্দীপ। যে বিভাগে জমা পড়েছে, সেখানকার প্রধানকে বলতেন, নোটশিটে উল্লেখ করতে, এর তদন্ত করুক হাসপাতালের অধ্যক্ষ। এমনকী স্বাস্থ্যভবনে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ  আসার পরেও সেই কপি চলে এসেছে সন্দীপবাবুর কাছে। সিবিআইয়ের দাবি, এখান থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে, নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত তিনি নিজেই করতেন। এমনকী সুপার বা ডেপুটি সুপারের কাছে সন্দীপবাবুর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ এলে, সংশ্লিষ্ট পদাধিকারীরা তাঁকেই তা ফরোয়ার্ড করে নোটশিটে জানাতেন, অধ্যক্ষ নিজে তদন্ত করে দেখুক। টানা তিনবছর ধরে এভাবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ চেপে রেখেছিলেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ। এমনটাই তাদের তদন্তে উঠে এসেছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের নজরে ছিল কি না জানতে, সেখানকার কয়েকজন পদাধিকারীকে নোটিস পাঠানো হচ্ছে বলে খবর। একইসঙ্গে সন্দীপের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যভবনে জমা পড়া অভিযোগের তদন্ত কারা করছিলেন, তাঁদেরও তলব করা হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)