• আজ শিক্ষক দিবস, গুরুদক্ষিণায় সপরিবার আন্দামান ভ্রমণ, সোনার কয়েন
    বর্তমান | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: একসময় প্রাণমন ঢেলে পড়িয়েছিলেন স্যর-ম্যাডামরা। তাঁদের জন্যই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা ছাত্র-ছাত্রীদের। এবার পালা গুরুদক্ষিণার। শিক্ষক দিবসের আগে তাই জীবন গড়ার কারিগরদের একের পর এক সারপ্রাইজ দিলেন আনন্দপুর এলাকার একটি বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা। তাতে কি নেই! উপহার পেয়ে আনন্দে চোখে জল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। অনেকেরই বক্তব্য, ‘স্মৃতির মণিকোঠায় আজীবন রয়ে যাবে এই দিন।’

    প্রাক্তনী সংসদ আগে থেকেই যোগাযোগ করেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। শিক্ষক দিবসে স্কুলের নিজস্ব অনুষ্ঠান থাকে। তাই অন্য একদিন এই সারপ্রাইজ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন প্রাক্তনীরা। তারপর বেছে নেন শনিবার। স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও আগাম কারণ না জানিয়ে ছুটির দিন হলেও সব শিক্ষক-শিক্ষিকাকে স্কুলে আসতে বলে। কোনও সিরিয়াস মিটিং আছে নাকি? স্কুলের তরফে কোনও বার্তা দেওয়া হবে? নানা জল্পনা চলতে থাকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে। উত্তরের জন্য শনিবারের অপেক্ষা করতে থাকেন। শনিবার সকালে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে স্কুলবাস ক্যাম্পাসে ঢুকল। সম্ভবত জীবনের অন্যতম সেরা চমকটি তাঁদের জন্য ক্যাম্পাসে অপেক্ষা করছে। 

    আগে থেকে দাঁড়িয়ে ঢাকির দল। শিক্ষকরা বাস থেকে নামতেই তাঁদের ঘিরে উৎসবের ছন্দে ঢাক বাজল। ধুনুচির ধোঁয়ায় ঢেকে গেল ক্যাম্পাস। সে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন শিক্ষকরা তখনও ধোঁয়াশায়। এরপর মঞ্চে প্রবেশ প্রাক্তনীদের। একটি বড় দল ৪০ ফুট লম্বা ব্যানার নিয়ে ঢুকল। তাতে লেখা, শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাগতবার্তা। এতক্ষণে শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে কিছুটা স্পষ্ট হল বিষয়টি। এরপর দফায় দফায় চমক।

    স্কুল অডিটোরিয়ামে হয়েছিল অনুষ্ঠানের আয়োজন। ছিল গেম শো। সেখানে সেরা পুরস্কার হিসেবে ছিল আন্দামানে সপরিবারে বেড়াতে যাওয়ার আড়াই লক্ষ টাকার প্যাকেজ। শুনে চমকে উঠলেন সবাই। পুরস্কারের তালিকায় দেড় লক্ষ টাকার রুপোর গণেশ মূর্তি। লক্ষাধিক টাকা দামের হোম থিয়েটার। এর মধ্যে কিছু জিনিস কোনও ছাত্র-ছাত্রীর প্রতিষ্ঠা করা সংস্থার নিজস্ব ব্র্যান্ডের। অর্থমূল্যের চেয়ে স্যর-ম্যাডামদের কাছে সেটা আরও বেশি গর্বের। ৪০ প্রাক্তনীর উদ্যোগে গুরুদক্ষিণা পেলেন ৩৩০ জনেরও বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা। গিফট ভাউচার। ২৫ গ্রাম সোনার কয়েন। ইলেকট্রিক কেটলি। সান গ্লাস। টি শার্ট। শাড়ি। কুর্তি। পারফিউম। পার্সোনালাইজড ডায়েরি ইত্যাদি উপহারের ডালি। ‘এসব তোরা কী করেছিস!’ এই এলাহি আয়োজনের জন্য প্রাক্তনীরা খানিক বকুনিও খেলেন। তবে আসল চমকের তখনও বাকি। 

    এবার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতে তুলে দেওয়া হল স্ক্র্যাপবুক। তাতে কমিক স্ট্রিপের মাধ্যমে প্রাক্তনীরা নিজের স্কুলবেলার স্মরণীয় এবং মজার ঘটনা তুলে ধরেছেন। সেসব ঘটনার অংশীদার ছিলেন বর্তমান শিক্ষকদের অনেকেই। হাতে পেয়ে আবেগে চোখ ভিজল স্যর-ম্যামদের। যাঁরা এখন মহীরূহ হয়ে ওঠার পথে, তাঁরা তখন ছিল সদ্য অঙ্কুরিত চারা। সময়ের মাটি খুঁড়ে তারাই বের করে আনল একের পর এক মহার্ঘ মুহূর্ত। আর হাতে পেয়ে স্মৃতির অতলে ডুবতে হল স্যর-ম্যামদের। শিক্ষক দিবসের স্মৃতি সততই সুখের।
  • Link to this news (বর্তমান)