• বরানগরের আবাসনে জোড়া মৃত্যু, রহস্য, ফ্ল্যাটের নীচে মুখে প্লাস্টিক বাঁধা যুবকের দেহ
    বর্তমান | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: গভীর রাতে মুখে প্লাস্টিক বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল এক তথ্য-প্রযুক্তি কর্মীর দেহ। তার কয়েকঘণ্টা মধ্যেই, সকালে কর্মরত অবস্থায় সাফাইকর্মীর মারা যাওয়ার ঘটনা। কলকাতার উপকণ্ঠে উত্তর ২৪ পরগনার বরানগরে অভিজাত আবাসন বিনায়ক এনক্লেভে পরপর রহস্যমৃত্যু! তার জেরেই বুধবার সকাল থেকে তীব্র চাঞ্চল্য সিঁথি এলাকায়। পুলিসের দাবি, আবাসনের মধ্যে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা খারাপ থাকায় ধন্দ আরও বেড়েছে। যদিও বিনায়ক এনক্লেভ অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, সিসি ক্যামেরার সমস্ত ফুটেজ দেওয়া হয়েছে তদন্তকারীদের। 

    জানা গিয়েছে, মৃত তথ্য-প্রযুক্তি কর্মীর নাম প্রণব বসু রায় (৪৩)। মঙ্গলবার রাত পৌনে দুটো নাগাদ আবাসনে নিজের ফ্ল্যাটের নীচ থেকেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। মৃতের মাথা সাদা প্লাস্টিক দিয়ে বাঁধা ছিল। সেই প্লাস্টিক সেলোটেপ দিয়ে জড়ানো ছিল গলাতেও। ঘটনাটি খুন নাকি আত্মহত্যা, তা নিয়ে সংশয়ে আবাসনের বাসিন্দারা। পুলিস অবশ্য খুনের অভিযোগ দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। সেই ঘটনার ৮-৯ ঘণ্টা পর, বুধবার সকালে বিনায়ক এনক্লেভে সাফাইয়ের কাজ করতে এসেছিলেন মনোজকুমার দাস (৫৬)। কর্মরত অবস্থাতেই অসুস্থ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। বারাকপুর কমিশনারেটের পুলিস কমিশনার অলোক রাজোরিয়া বলেন, মৃতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। সমস্ত দিক খোলা রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।

    বরানগরের অন্যতম বড় আবাসন বিনায়ক এনক্লেভ। প্রায় ৮০০ ফ্ল্যাট রয়েছে সেখানে। বাসিন্দার সংখ্যা দুই থেকে আড়াই হাজার। এই আবাসনের চার নম্বর ব্লকের চার তলায় ৩০২ নম্বর ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকতেন প্রণববাবু। বাবা পুলক বসু রায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী ছাড়াও ছোট পুত্র সন্তান রয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ স্কুটার নিয়ে চার নম্বর ব্লকের সামনে দিয়ে আসছিলেন এক আবাসিক। তিনিই ফ্ল্যাটের নীচে প্রণববাবুর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বরানগর থানার পুলিস। জানা গিয়েছে, চার নম্বর ব্লকের পাশে ‘ই’ ব্লকের দু’নম্বর গেটের সামনে পড়েছিলেন প্রণববাবু। মৃতদেহের মাথা সাদা প্লাস্টিকে বাঁধা ছিল। বাঁ হাত ও পা ভেঙে গেলেও শরীরের কোনও অংশ থেকে রক্ত বের হয়নি। চার নম্বর ব্লকের ছাদে ওই যুবকের জুতো উদ্ধার হয়েছে।

    মৃতদেহ যে জায়গায় উদ্ধার হয়েছে, তার পাশে সিসি ক্যামেরা খারাপ থাকায় কোনও ফুটেজ পায়নি পুলিস। তবে আবাসনের গেটে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, রাত আটটা নাগাদ হলুদ গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট পরে গেট দিয়ে বেরিয়েছিলেন ওই যুবক। হাতে জলের বোতল নিয়ে ফিরেও আসেন রাত ১১টা ১০ মিনিটে। পরিবার পুলিসকে জানিয়েছে, রাত আটটা নাগাদ ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি প্রণববাবু। তাহলে রাত ১১টা থেকে ১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত তিনি কোথায় ছিলেন? সেটাই বড় রহস্য। পুলিস জানিয়েছে, আবাসনের মধ্যে সচল থাকা সমস্ত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

    সেই ঘটনার পর এদিন সকালে আবাসনে সাফাইয়ের কাজে এসেছিলেন মনোজকুমার দাস। তাঁর বাড়ি কলকাতা পুরসভা এলাকায়। সকাল ১১টা নাগাদ আবাসনের কমিউনিটি হল পরিষ্কার করছিলেন। ওই সময় আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে বরানগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিস জানিয়েছে, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই মনোজবাবুর মৃত্যু হয়েছে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)